ঢাকা শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে পাহাড় কাটার ঘটনায় পরিবেশ অধিদফতরের নোটিস


প্রকাশিত:
১৩ জানুয়ারী ২০২০ ২৩:০৬

আপডেট:
১৮ মে ২০২৪ ১৭:৪২

ফাইল ছবি

পরিবেশ টিভি: বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন করে পাহাড় কাটার অভিযোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রশাসনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে পরিবেশ অধিদফতরের কুমিল্লা জেলা কার্যালয়। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র না নিয়ে একের পর এক পাহাড় কাটছে কুবি প্রশাসন। এতে পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়টি হারাচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে পরিবেশ অধিদফতরের কোনো ছাড়পত্র না নিয়ে পাহাড় কাটায় এ নোটিস দেওয়া হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন উপলক্ষে প্যান্ডেল প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের উত্তর পাশের পাহাড় কেটে মাটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং মাঠের বিভিন্ন জায়গা সমান করা হয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন সময় পাহাড়টি কাটা হয়েছিল।

আগামী ২৭ জানুয়ারি প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে কেন্দ্রীয় মাঠে। বর্তমানে পাহাড়ের নিচের অংশ বেশি কাটার ফলে যেকোনো সময় পাহাড়টি ধসে পড়ার আশঙ্কা করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অভিযোগ রয়েছে, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছোট-বড় টিলা ও পাহাড় কেটে সাবাড় করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

পাহাড় বা টিলা কাটার সময় কোনোবারই তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতর থেকে কোনো ছাড়পত্র নেয়নি। কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের পশ্চিম পাশের টিলার অনেকটা অংশ এক্সেভেটরের সাহায্যে কেটে ফেলা হয়। সেই মাটি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে নির্মাণাধীন সড়কদ্বীপ ও ডরমেটরির নিচু স্থান ভরাট করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তা ছাড়া বিভিন্ন সময়ে পাহাড় কেটে সেই মাটি বিক্রি করারও অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, লালমাটির ক্যাম্পাস খ্যাত এ কুবির সৌন্দর্য হচ্ছে এ পাহাড়গুলো। কিন্তু বিভিন্ন উন্নয়নের অজুহাত দিয়ে এ লালমাটির পাহাড় কেটে ফেলছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন ধ্বংস হচ্ছে তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ও তার প্রকৃত রঙ হারাচ্ছে। অথচ এই পাহাড় আমাদের গর্ব ও ঐতিহ্য।

এগুলো রক্ষা করা প্রশাসনের দায়িত্ব। অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের (সংশোধন) ২০১০-এর ৬-এর ‘খ’ ধারায় বলা হয়েছে ‘কোনো পাহাড় বা টিলা কর্তন বা মোচন করা যাইবে না, তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র গ্রহণক্রমে পাহাড় কর্তন করা যাইবে।’

পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এবারও পাহাড় কাটার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিবেশ অধিদফতর থেকে কোনো ধরনের ছাড়পত্র নেয়নি। পাহাড় কর্তনের বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ হতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদফতর কুমিল্লা কার্যালয়ের পরিচালক শওকত আরা কলি বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিবেশ অধিদফতর থেকে পাহাড় কাটার বিষয়ে কোনো অনুমতি নেয়নি। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আমরা কেন এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে না এ মর্মে একটি কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছি এবং তাদের সঙ্গে শুনানি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছি।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, পরিবেশ অধিদফতরে আমাদের শুনানি ছিল আমরা শুনানিতে অংশগ্রহণ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ হতে পাহাড়-টিলা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এ ঘটনায় যে ঠিকাদার কাজ করেছে তাদের মূল কাজের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের ১৫ শতাংশ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।


বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top