সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় মে মাসে
দেশে মে মাসে গড়ে ১৪টি বজ্রপাত হয়। এ সময় বজ্রবিদ্যুতের ঝলকানির দেখা মেলে প্রায় ৩২ লাখ বারের মত। আর বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সময় হচ্ছে রাত ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা থেকে জানা গেছে, বায়ু দূষণ, তাপপ্রবাহ ও উঁচু গাছ কেটে ফেলার প্রভাবেই এ প্রবণতা বাড়ছে।
ইদানিং তীব্র তাপপ্রবাহ শেষে স্বস্তির বৃষ্টির সঙ্গে আতঙ্ক হয়ে এসেছে বজ্রপাত। এই বছর শুধু মে মাসের প্রথম ৭ দিনেই দেশের পূর্বাঞ্চল ও হাওর এলাকায় এ র কারনে অন্তত ২০ জনের প্রাণ গিয়েছে। বজ্রপাতে মৃতদের ৭০ ভাগই মাঠে কাজ করা কৃষক। আর গোসল ও মাছ ধরার সময় মৃত্যু হয়েছে ১৩ শতাংশের।
দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এতে বছরে গড়ে মৃত্যু হয় ২৬৫ জনের। গত ১২ বছরে প্রাণহানি ৩ হাজারের বেশি। বজ্রপাতে ২০২৩ সালে ৩৪০ জন, ২০২২ সালে ২৭৪ জন, ২০২১ সালে ৩৬৩ জন, ২০২০ সালে ২৩৬ জন, ২০১৯ ১৬৮ জন, ২০১৮ সালে ৩৫৯ জন, ২০১৭ সালে ৩০১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের গবেষণা বলছে, বজ্রপাত বাড়ার বড় কারণ হিসেবে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও উঁচু গাছ কাটাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতি ডিগ্রি উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য বজ্রপাত বাড়ে ১২ শতাংশ। বন্যা-ঘূর্ণিঝড়ে পূর্বাভাস দিয়ে প্রাণহানি কমানো গেলেও- বজ্রপাতে সে সুযোগ নেই। মোট বজ্রপাতে ৭০ ভাগই এপ্রিল, মে ও জুনে।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.আশরাফ দেওয়ান বলেন, ‘ঢাকার আশপাশের যে জেলাগুলো নরসিংদী, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ এই এলাকাগুলোতে বজ্রপাতে যে মৃত্যুর সংখ্যা এর সাথে বায়ু দূষণের একটা সম্পর্ক আমরা পেয়েছি। বায়ু দূষণ তো এক জায়গায় থাকে না, যখন বাতাস আসে তখন সে তখন চলে যায়। চলে গিয়ে আশপাশের এলাকাতে মেঘ যেভাবে হয় ওই পদ্ধতিকে সে পরিবর্তন করে ফেলে।’
মৌসুমি বায়ু প্রবেশের আগের ২ মাস এপ্রিল ও মে-তে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে এর প্রকোপ থাকে বেশি। বর্ষায় তীব্রতা বাড়ে সুনামগঞ্জসহ রাঙামাটি-চট্টগ্রামে। শীতে বেশি আক্রান্ত হয় খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট।
জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ট্রান্সবাউন্ডারি বজ্রঝড় এবং হাইলি লোকালাইজড বজ্রঝড়ের প্যাটার্ন ও তার শক্তিমত্তার মধ্যে কিছুটা ব্যত্যয় ঘটেছে। তবে দীর্ঘ তাপপ্রবাহের পর যখন বজ্রঝড় হয় তার শক্তিমত্তা অনেক বেশি থাকে।
দেশের আকাশে ৩ ধরনের বজ্রবিদ্যুতের দেখা মেলে। এর সবগুলো ভূপৃষ্ঠে না পড়লেও- প্রাণহানি এড়াতে উঁচু স্থান, জলাশয় ও খোলা জায়গা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েন গবেষকেরা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: