রহস্যে ঘেরা ‘‘কমোডো” দ্বীপ

ইন্দোনেশিয়ার বেশ বিখ্যাত এক দুর্গম পাথুরে দ্বীপ কমোডো। জনশ্রুতি আছে এই দ্বীপে নাকি ভয়ানক ও বিশালাকার এক প্রাণী বাস করে। আসলেই কি সেখানে এমন কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব আছে নাকি পুরোটাই স্থানীয় আদিবাসীদের গালগপ্পো—এটা ছিল অমীমাংসিত এক রহস্য।
শেষ পর্যন্ত সেই রহস্যভেদে এগিয়ে এলেন এক মার্কিন অভিযাত্রী। ১৯২৬ সালে কমোডো দ্বীপের উদ্দেশ্যে বিপজ্জনক এক অভিযানে বেরিয়ে পড়লেন তিনি।
ডাব্লিউ ডগলাস বার্ডেন নামের মার্কিন ধনকুবেরের নেশা ছিল শিকার আর অভিযান।
কাজেই কমোডো দ্বীপের রহস্যময় ‘ড্রাগন’তাঁকে আকর্ষণ করে। শেষ পর্যন্ত তিনি আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্টরিকে রাজিও করিয়ে ফেললেন, তাঁর এই বিশাল কর্মযজ্ঞে পাশে দাঁড়াতে। ডগলাস পরিকল্পনা করলেন, ইন্দোনেশিয়ার দুর্গম ওই দ্বীপে যাবেন। এক জোড়া প্রাণী ধরবেন।
তারপর তাদের নিয়ে আসবেন নিউ ইয়র্কে। সেই পরিকল্পনায় চব্বিশ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার বিপজ্জনক এক অভিযান শুরু করলেন। সঙ্গে নিলেন এক সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ, এক নামি শিকারি আর তাঁর তরুণী স্ত্রীকে।
দ্বীপে পৌঁছার পর অবশ্য ডগলাসদের খুব বেশি অপেক্ষা করতে হলো না। খুব তাড়াতাড়িই তাঁরা কমোডো দ্বীপের আজব প্রাণীটির পায়ের ছাপ খুঁজে পেলেন।
একেকটা ছাপ ইয়া বড় বড়। জাদুঘরে সংরক্ষিত ডাইনোসরের পায়ের ছাপের কথাই মনে করিয়ে দিল তাঁকে এগুলো। পায়ের ছাপ অনুসরণ করে খুব দ্রুত প্রাণীগুলোরও দেখা মিলল। দৈত্যগুলো আসলে বিশাল আকৃতির এক জাতের সরীসৃপ। মাথা আরো বড়। ওটার আছে কাঁটাওয়ালা জিভ।
খোঁজ যখন মিলল, তখন বাকি কাজেও ঝটপট নেমে পড়লেন ডগলাস আর তাঁর সঙ্গীরা। সফল অভিযান শেষে যখন নিউ ইয়র্কে ফিরেও এলেন তখন তাঁদের সঙ্গে এক জোড়া জ্যান্ত কমোডো দ্বীপের দৈত্য। আর এক ডজন মরা দৈত্য। জ্যান্ত জোড়া দেওয়া হলো ওখানকার চিড়িয়াখানায়। আর মরাগুলো দেওয়া হলো জাদুঘরে। কমোডো ড্রাগনরা এখনো ইন্দোনেশিয়ার কমোডো দ্বীপ ও এর আশপাশের কয়েকটা দ্বীপে বাস করে। তবে তাদের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। কারণ, কমোডো ড্রাগনদের বাসভূমি—জঙ্গলগুলোই দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। কাঠের প্রয়োজনে আর রাস্তাঘাট বানাতে গিয়ে মানুষ উজাড় করছে বন। এখন ওখানে মাত্র হাজার পাঁচেক কমোডো ড্রাগন টিকে আছে, সব মিলিয়ে। এক সময়ের কিংবদন্তি এই প্রাণীগুলো সত্যিই তাই বিলুপ্তির আশঙ্কায়।
বিষয়: কমোডো ইন্দোনেশিয়া
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: