ঢাকা সোমবার, ১৩ই মে ২০২৪, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩১


মাদাগাস্কারে অভিনব পরিবেশবান্ধব জ্বালানি


প্রকাশিত:
২৪ অক্টোবর ২০২৩ ১২:১৯

আপডেট:
১৩ মে ২০২৪ ২৩:০৫

বন নিধন বন্ধ করতে রান্নার জন্য পরিবেশবান্ধব জ্বালানি এবং সেই জ্বালানি ব্যবহারের উপযুক্ত চুলা প্রস্তুত করার অভিনব উদ্যোগ চলছে মাদাগাস্কারে। জার্মানির এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও সেই প্রকল্পে শামিল হয়েছে।

ঘাস দিয়ে কীভাবে সবচেয়ে কার্যকর পেলেট বা ঘুঁটে তৈরি করা যায়, সেটাই ছিল ইয়ুলিয়ান স্প্রাটের মাস্টার্স থিসিসের অন্যতম বিষয়। ড্যুসেলডর্ফ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার অফ ইনোভেটিভ এনার্জি সিস্টেমস'-এ তিনি এক রান্নার চুলা তৈরিরও চেষ্টা করছেন, যেটি জ্বালানি হিসেবে গ্রাস পেলেটের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করবে। এভাবে মাদাগাস্কারে অরণ্য নিধন বন্ধ করতে চান তিনি।

ইয়ুলিয়ান বলেন, ‘‘গ্লোবাল সাউথ বলে পরিচিত দেশগুলিতে আরো কার্যকর স্টোভ সরবরাহ করে আমরা বলতে পারি না, যে সেগুলি মানুষকে সাহায্য করবে। সেটা এখানে বন নিধন বন্ধ করতে সামান্য প্রভাব রাখবে৷ তাই আমরা আরো কার্যকর বিকল্প জ্বালানি সৃষ্টির উদ্যোগ নিচ্ছিল''।

মূল আইডিয়াটি মাদাগাস্কারের এই ছাত্র এবং আজিপিয়ার নামের পরিবেশ সংগঠনের কাছ থেকে এসেছিল। তারা পরিবেশবান্ধব চুলা ও কমপ্রেসড ঘাস দিয়ে পেলেট তৈরি করেছিলেন। ছাত্ররা স্থানীয় মানুষের কাছে সেই প্রণালী পরীক্ষার জন্য নিয়ে আসেন। জার্মানির ছাত্ররা মাদাগাস্কারে গিয়ে সেই প্রকল্প দেখে সেটির আরো উন্নতি করতে চেয়েছিলেন।

মাদাগাস্কারে বিকল্প জ্বালানির সত্যি প্রয়োজন রয়েছে। সেখানে অরণ্য নিধন মারাত্মক ক্ষতি করেছে। মানুষ চিরায়ত পদ্ধতিতে গাছ কেটে রান্নার জন্য কাঠকয়লা হিসেবে ব্যবহার করেছে। বর্তমানে মূল অরণ্যের মাত্র দশ শতাংশ অবশিষ্ট রয়েছে। ফলে দ্বীপের অনেক প্রজাতির বাসস্থানও হারিয়ে গেছে৷

মাদাগাস্কারের দক্ষিণে মিসক্যান্থাস জাতের ঘাসের বাড়বাড়ন্ত। সহজেই সব জায়গায় এই ঘাস গজায়৷ স্থানীয় মানুষ প্রায়ই সেই ঘাস জ্বালিয়ে খেত খালি করে। বিপজ্জনক এই পদ্ধতির কারণে প্রায়ই দাবানল সৃষ্টি হয়৷

আজিপিয়ার সংগঠনের টিম মিসক্যান্থাস ঘাসকে মূল্যবান সম্পদ ও স্থানীয় মানুষের আয়ের উৎস হিসেবে চিহ্নিত করেছে৷ সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ভাও ফ্লোরঁ মিশেল তোজো আন্দ্রিনিরাইনি বলেন, ‘‘আমরা বিশাল আকারে এমন পেলেট উৎপাদনের পরিকল্পনা করছি৷ একই সঙ্গে সেই পেলেটের জন্য নির্দিষ্ট এই চুলাও বড় সংখ্যায় তৈরি করতে হবে৷ গোটা দেশে আমরা এই সমাধানসূত্র ছড়িয়ে দিতে চাই৷''

এদিকে জার্মানিতে এক স্থানীয় কারিগরি স্কুলের সহায়তায় ড্যুসেলডর্ফ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সৌরশক্তি চালিত পেলেটের কারখানার ডিজাইন করছেন৷ মাদাগাস্কারে বিশাল আকারে বিকল্প জ্বালানি উৎপাদন করবে সেই কারখানা৷

ঘাস কাটার যন্ত্র ও হাতুড়ি ঘাসকে পেলেটে রূপান্তরিত করবে৷ গোটা কারখানা খুলে নিয়ে দুটি শিপিং কন্টেনারে ভরে ফেলা সম্ভব৷ উৎপাদনের ব্যয় হিসেবে ক্রাউডফান্ডিং বা জনসাধারণের কাছ থেকে প্রায় ৭০,০০০ ইউরো অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে৷ ড্যুসেলডর্ফ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়ুলিয়ান স্প্রাটে বলেন, ‘‘আমরা সবকিছু পরীক্ষা করছি, তারপর তৈরি করতে সাহায্য করছি৷ যে ছাত্ররা এই প্রকল্পে কাজ করছে ও থিসিস লিখছে, তাদের আমরা পাঠিয়ে দেবো৷''

ড্যুসেলডর্ফ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর এক প্রতিনিধি নাওমি ওয়াং বলেন, ‘‘আমরা আজ এক স্কুলের ক্লাসের সঙ্গে নির্মাণের প্রস্তুতির কাজ করেছি৷ যেমন ছাদে আগেই ড্রিল করে রেখেছি, যাতে সাইটে জোড়া দিতে সুবিধা হয়৷ তখন আর নীচে ড্রিল করতে হবে না৷ স্ক্রু দিয়ে জোড়া লাগালেই চলবে৷''

মাদাগাস্কারের দক্ষিণে আন্দালামেনগোকে অঞ্চলে পেলেট কারখানাটি গড়ে তোলার কথা৷ মিসক্যান্থাস ঘাসের অফুরন্ত জোগানের কারণে সেই সাইট বেছে নেওয়া হয়েছে৷ আজিপিয়ার অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা রোম্যাঁ রাবেআরিসোয়া বলেন, ‘‘এপ্রিল মাসে আমরা সাধারণত ঘাস কাটে সংগ্রহের কাজ শুরু করি৷ সে সময় এখানে চারিদিকে ঘাস গজায়৷ এপ্রিল মাসে ঘাস কাটার পর বৃষ্টি হলে আমরা দ্বিতীয় ফসলও পেয়ে যাই৷''

আন্দালামেনগোকে এলাকার বাসিন্দা মাদাম বার্কোলি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, এই প্রকল্পের ফলে গ্রামের উপকার হবে এবং মানুষ আর জঙ্গলের ক্ষতি করবে না৷ পানি আবার ভরা হবে এবং পরিস্থিতির উন্নতি হবে৷''

৩৫ কিলো কাঠকয়লার বস্তার দাম চার ইউরোর মতো৷ একই পরিমাণ ঘাসের পেলেটের দাম মাত্র তিন ইউরো৷ ফলে নতুন এই জ্বালানি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে৷ আজিপিয়ার সহ-প্রতিষ্ঠাতা আন্দ্রিনিরাইনি বলেন, ‘‘মাদাগাস্কারের দক্ষিণে সাফল্য পেলে গোটা দেশে আমরা এই ঘাস ও পদ্ধতি ছড়িয়ে দেবো৷''

ড্যুসেলডর্ফ বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম এই উদ্যোগে সহায়তা করতে এক অলাভজনক কোম্পানি চালু করেছে৷ পরীক্ষামূলক পর্যায়ে সাফল্যের পর পেলেটের কারখানা খুলে জাহাজের কন্টেনারে ভরে মাদাগাস্কারে পাঠানো হয়েছে৷ ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসেই সেটি চালু হবার কথা৷


বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top