ঢাকা সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৭ই বৈশাখ ১৪৩১


অবৈধ ইটভাটার জন্য জলাশয়ে বাঁধ, ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ


প্রকাশিত:
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:৪৩

আপডেট:
২৯ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:০৩

চট্টগ্রামের রাউজানে অবৈধ একটি ইটভাটার জন্য খালের সঙ্গে সংযুক্ত জলাশয়ে বাঁধ দিয়েছে ইটভাটা কর্তৃপক্ষ। খালের পানি যাতে জমি প্লাবিত করতে না পারে, এ জন্য বাঁধ দিয়েছেন তারা। শুধু বাঁধ দিয়েই ক্ষান্ত হননি, গত দুই মাসে অন্তত ৩০ একর কৃষিজমির টপ সয়েল কেটে নেওয়া হয়েছে তাদের অবৈধ ইটভাটার জন্য। মাটি নেওয়ার জন্য খালের পাশ থেকে প্রায় ২০ থেকে ২৫ ফুট গভীর করে গর্ত খুঁড়ে মাটি নিচ্ছেন তারা। যার কারনে অনেকেরই সেচের কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে। বিশেষ করে যারা চাষাবাদের জন্য খাল থেকে পানি সংগ্রহ করতেন তারা বিপাকে পড়েছেন। গভীর করে মাটি কাটার কারণে আশপাশের অনেক জমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

বাঁধ দিয়ে এখান থেকে মাটি কেটে খনন করায় ওই সব ফসলি জমি ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। পাশাপাশি শীতকালীন সবজিখেতে পানি দিতে দুর্ভোগে পড়েছেন কৃষকেরা।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশদূষণের দায়ে ২০২১ সালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে মোকামীপাড়া গ্রামে অবস্থিত ইটভাটাটি গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঘনবসতিপূর্ণ গ্রামের ২০০ মিটার দূরত্বে এই ইটভাটার অবস্থান। কিন্তু সপ্তাহ পার না হতেই আবার চালু করা হয় এটি। চালুর পর হালদার সঙ্গে সংযুক্ত সকর্দা খালের একটি জলধারায় বাঁধ জমির মাটি কাটা শুরু করে ইটভাটা কর্তৃপক্ষ।

গত বুধবার মোকামীপাড়ার এ আলী ব্রিকস নামের ওই ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, হালদার শাখা সর্কদা খালের এক পাশের লেকে ২০ থেকে ২৫ ফুট মাটি দিয়ে ভরাট করে পানি আটকানো হয়েছে। ৩০০ থেকে ৪০০ মিটার এলাকার কৃষিজমি খনন করা হয়েছে, যার গভীরতা ২০ থেকে ২৫ ফুটের মতো। খালের এক পাশে বাঁধ দেওয়ার কারণে চাষের জমিতে পানি দিতে পারছেন না এলাকার কৃষকেরা। পরিদর্শনে দেখা যায়, খনন করা ওই জমির তিন পাশে অন্তত ৫০ একর জমিতে নানান সবজির চাষ করেছেন কৃষকেরা।

ইটভাটার মালিকেরা ব্যক্তিগত জমি থেকে মাটি কাটার কথা বললেও খাসজমি থেকেও তাঁরা মাটি কাটছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি থেকেও মাটি কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দা তাসলিমা আকতার। তিনি বলেন, তাঁরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা ইজারা নিয়ে বসবাস করেন। তাঁদের ঘরের পাশ থেকেও মাটি কেটে ওই ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।


ব্যাহত হচ্ছে সেচ

স্থানীয় কৃষক নাজমুল আলম বলেন, তিনি এ মৌসুমে কয়েক একর জমিতে সবজি চাষ করেছেন। এক মাস ধরে খালের পাশে বাঁধ দেওয়ায় তাঁরা চাষ করা শীতকালীন সবজিতে পানি দিতে পারছেন না। তাঁর মতো আরও ২০ থেকে ৩০ জন কৃষক একই সমস্যায় আছেন।

ওই এলাকার ২০ একর জমির মালিক সৈয়দ মুহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, তাঁদের জমির পাশ থেকে মাটি কাটায় এক একরের মতো জমি তলিয়ে গেছে, যা এখন হাতছাড়া হয়ে খাদে চলে গেছে। এ ছাড়া মাটি কাটার কারণে জমির ভাঙন অব্যাহত আছে। তিনি আশঙ্কা করছেন, সামনের বর্ষায় আরও জমি খাদে তলিয়ে যাবে।

যা বললেন ইটভাটার মালিক

এই অবৈধ ইটভাটার মালিক পাশের ইউনিয়ন উরকিরচরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল আলমের তিন ছেলে। তাঁদের একজন জাহেদুল আলম গত মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ইটভাটাটির বৈধতা নেই। তিনি বলেন, ‘কারও ক্ষতি করে আমরা ইটভাটা চালাচ্ছি না। কৃষিজমির মাটি যেখান থেকে কাটা হচ্ছে, সেগুলো আমাদের কেনা জমি।’ তবে এখান থেকে মাটি কাটার কারণে অন্যের জমি যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সেটি তিনি তদারক করে দেখবেন।

হালদাপাড়ে অবৈধ ইটভাটা আবার চালু করা প্রসঙ্গে নদী গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া জানান, হালদার মতো দেশের জাতীয় ঐতিহ্য এ নদীপাড়ে ইটভাটা থাকা ক্ষতিকর। কারণ ইটভাটার ধোঁয়ায় নদীর জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়।

রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অংগ্য জাই মারমা বলেন, কৃষিজমির টপ সয়েল কেটে ইট বানানোর সুযোগ নেই। কেউ করলে দণ্ডনীয় অপরাধ। ওই ভাটায় খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক আজহারুল ইসলাম জানান, এ আলী ব্রিক ইটভাটাটির কোনো নিবন্ধন নেই। এটি জেলা ও উপজেলা প্রশাসন অভিযান করলে তাঁরা সহযোগিতা করবেন।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top