ঢাকা শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১


জলাশয় ভরাটে বিএডিসির কার্যক্রমে বাধা দিল হাইকোর্ট


প্রকাশিত:
২৯ জানুয়ারী ২০২৪ ১৮:৩৪

আপডেট:
৪ মে ২০২৪ ০০:০৫

ঢাকায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সেন্ট্রাল টিস্যু কালচার অ্যান্ড সিড হেলথ ল্যাবরেটরি নির্মাণের জন্য ড্যাপে চিহ্নিত জলাশয় ভরাট কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। জলাশয়ের ভরাট করা অংশ তিন মাসের মধ্যে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ও জলাশয় হিসেবে তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিএডিসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পৃথক দুটি রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ রায় (রুল অ্যাবসলিউট) দেন।

ড্যাপে চিহ্নিত ওই জলাশয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত মিরপুর মৌজার গৈদারটেক এলাকায়। ওই এলাকায় (১০টি প্লট) জলাশয় মাটি ভরাট রোধে ও জলাশয় হিসেবে সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে গত বছর বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) একটি রিট করে। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৩ আগস্ট হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। ওই এলাকার পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য ১১৭ একর জায়গা প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। এর আগে সেখানকার চারটি প্লটে (গৈদারটেক ও কল্যাণপুর) প্রায় ১২ একর জলাশয় ভরাট কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে আমীর চানসহ মিরপুরের স্থানীয় দুই বাসিন্দা গত বছর একটি রিট করেন। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ২৫ জুন হাইকোর্ট রুলসহ স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন। পৃথক রুলের ওপর একসঙ্গে শুনানি শেষে আজ রায় দেওয়া হয়।

আদালতে বেলার পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ আশরাফ আলী শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এস হাসানুল বান্না। অপর রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মেজবাহুর রহমান। বিএডিসির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও আইনজীবী এস এম জহুরুল ইসলাম। উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে আইনজীবী রেজা-ই-রাব্বি খন্দকার ও রাজউকের পক্ষে আইনজীবী ইমাম হাছান শুনানিতে ছিলেন।

আইনজীবী মোহাম্মদ আশরাফ আলী জানান, বিএডিসির সেন্ট্রাল টিস্যু কালচার অ্যান্ড সিড হেলথ ল্যাবরেটরি নির্মাণের জন্য ড্যাপে চিহ্নিত জলাশয় ভরাট কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। জলাশয়ের ভরাট করা অংশ তিন মাসের মধ্যে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ও জলাশয় হিসেবে তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিএডিসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অপর রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মেজবাহুর রহমান জানান, গৈদারটেক ও কল্যাণপূরে অবস্থিত ১১৭ একর জায়গা প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে ড্যাপে (২০২২–৩৫) চিহ্নিত। ল্যাব নির্মাণের জন্য জলাধারের কয়েকটি প্লটে মাটি ভরাট কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে রিট করা হয়, কারণ জলাধার ভরাট প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের পরিপন্থী। টিস্যু কালচার ল্যাব নির্মাণের জন্য মাটি ভরাট কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।

বিএডিসির আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ জানান, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।

বেলা জানায়, আধুনিক পদ্ধতিতে বীজ আলু উৎপাদনের লক্ষ্যে ‘সেন্ট্রাল টিস্যু কালচার অ্যান্ড সিড হেলথ ল্যাবরেটরি’ নির্মাণের জন্য ড্যাপে (২০২২-২০৩৫) চিহ্নিত জলাশয়ের প্রায় ১২ একর জমি ভরাট করে বিএডিসি। জনগুরুত্বপূর্ণ এই জলাশয় ভরাট নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ওই জলাশয় ভরাটের বিরুদ্ধে বিএডিসিকে চিঠি দেয়। রাজউক ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের চিঠি অনুসরণ না করে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই ওই জলাশয় ভরাট করে বিএডিসি।

প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ও বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) জলাশয় হিসেবে চিহ্নিত ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন এবং জলাশয় ভরাট ও অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণের সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেছে বেলা। বেলা বলেছে, টাউন ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী রাজউকের আওতাধীন এলাকায় যেকোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন করতে হলে রাজউকের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দেশে প্রচলিত আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিএডিসির জলাশয় ভরাট কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বেলা রিটটি করে। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৩ আগস্ট হাইকোর্ট রুল দিয়ে ওই জলাশয়ে পুনরায় মাটি ভরাট ও যেকোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ থেকে বিরত থাকতে নিষেধাজ্ঞা দেন।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top