ঢাকা শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১


মরুভূমির পেটে হারিয়ে যাচ্ছে নাইজেরিয়া


প্রকাশিত:
১৮ জানুয়ারী ২০২৪ ১৯:১১

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৪৯

ফাইল ছবি

বিশ্বের বৃহত্তম উষ্ণ মরুভূমি ‘সাহারা’। উত্তর আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশজুড়ে বিস্তৃত। এ মরুভূমি থেকে নাইজেরিয়ার দূরত্ব ২ হাজার ৬৫৭ কিলোমিটার (১ হাজার ৬৫১ মাইল) হলেও দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের কিছু অংশ এখন এর কবলে। ঘিরে ফেলেছে সীমান্ত সংলগ্ন নাইজেরিয়ার ইয়োব রাজ্যের তোশিয়া শহরকে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মরুভূমিটি বেশ প্রসারিত হয়ে এ রাজ্যের আরও কাছাকাছি চলে এসেছে। তোশিয়া শহরের ভিটেমাটিসহ আয় রোজগারের উৎস ধ্বংস করে দিয়েছে। খামারসহ একে একে গ্রাস করেছে ২০টিরও বেশি বাড়ি। মরুভূমির পেটেই হারিয়ে যাচ্ছে নাইজেরিয়ার এ রাজ্য। আলজাজিরা।

রাজ্যের রাজধানী দামাতুরুর ফেডারেল পলিটেকনিকের পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের লেকচারার লওয়ান চেরি বলেছেন, প্রতি তিন বছরে মরুভূমিটি কমপক্ষে ২ কিলোমিটার (১.২৪ মাইল) প্রসারিত হয়। এর মূল কারণ হিসেবে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি এবং ব্যাপক বন উজাড়কে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তোশিয়া গ্রামের প্রধান মাইগারি ইসা বুকার বলেছেন, ‘মরুভূমি ভাই, বাবা এবং আমার ১০টি খামার গ্রাস করেছে।’ ৪০ বছর বয়সি আট সন্তানের বাবা বুলামা মেলে বলেছেন, ‘মরুভূমি শহরটিকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে। ফলশ্রুতিতে তোশিয়ায় তার দুটি খামার মরুভূমিতে হারিয়ে গেছে।’ বুকার আলজাজিরাকে আরও বলেছেন, ‘আমাদের জীবন কঠিন হয়ে পড়েছে। চাষাবাদের অবস্থার অবনতি হওয়ায় আমাদের কাছে খাবার নেই। খামার করার কোনো জায়গা নেই। ঘাস ও খাবারের অভাবে কিছু প্রাণী অনাহারে মারা গেছে। ফলে গরু-ছাগলের উৎপাদনও কমে গেছে। ৬১ বছর বয়সি চাষি দাউদা মাইগারি বলেছেন, পরিবর্তিত জলবায়ু তার পরিবারের কৃষিকাজ এবং গবাদিপশু লালন-পালনের ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করছে।

মরুভূমি আশপাশের এলাকায় বিস্তৃত হয়েছে। আলজাজিরা আরও বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলেছে। যারা বলেছেন, বালু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ২০টিরও বেশি বাড়িকে ঢেকে দিয়েছে।

২০০৬ সালে নাইজেরিয়ার শেষ আদমশুমারির সময় থেকে ইয়োবে জনসংখ্যা ২.৩ মিলিয়ন বর্তমানে আনুমানিক চার মিলিয়নে পৌঁছেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪২ শতাংশ। সেই বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষিজমি এবং রান্নার জ্বালানির চাহিদা বেড়েছে।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, আধা-শুষ্ক অঞ্চলে মরুভূমি দখলের কারণগুলোর মধ্যে
রয়েছে- স্বল্প আয়ের পরিবারের ব্যাপক বন উজাড়। যারা রান্নার জন্য শক্তির প্রাথমিক উৎস হিসাবে কাঠ ব্যবহার করে। ভর্তুকি প্রত্যাহার এখন এ সম্প্রদায়ের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের রান্নার গ্যাসের অ্যাক্সেসকে কঠিন করে তুলেছে। ক্রমাগত বন উজাড়ের দিকে পরিচালিত করেছে।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বাস্তুতন্ত্রের ওপর চাপ আরও বেড়েছে। উচ্চ তাপমাত্রার কারণে গাছের বৃদ্ধিও ব্যাহত হয়েছে। বনায়নের মাধ্যমে পরিস্থিতি উদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছে রাজ্য সরকার।

সাহারা মরুভূমি মরক্কো, আলজেরিয়া, চাদ, মিসর, লিবিয়া, মালি, মৌরিতানিয়া, নাইজার, পশ্চিম সাহারা, সুদান এবং তিউনিসিয়া দেশগুলোজুড়ে বিস্তৃত।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top