ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

দেশের ছয় জেলায় ঝড়-বজ্রপাতের তান্ডব, নিহত ৯


প্রকাশিত:
৭ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৪৬

আপডেট:
২ মে ২০২৪ ১৫:৫৯

সংগৃহীত ছবি

দেশের ছয় জেলায় ঝড় ও বজ্রপাতে নয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন এবং দুইজন জেলের নিখোঁজ হয়েছেন বলে জানা যায় । এসব ঘটনার পাশাপাশি অন্তত ২৫টি গরু ও মহিষের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে।

রোববার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, নেত্রকোণা, যশোর, পিরোজপুর ও ভোলায় এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

এ সময় ঝড়ে গাছ পড়ে বাড়িঘর ও বৈদ্যুতিক খুঁটি বিধ্বস্ত হয়েছে। পাশাপাশি ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে। অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে।

এর মধ্যে ঝড়ে গাছ ভেঙে পটুয়াখালীর বাউফলে এবং পিরোজপুর সদর উপজেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

এ ছাড়া বজ্রপাতে ঝালকাঠি সদর ও কাঠালিয়া উপজেলায় তিনজন, নেত্রকোণার খালিয়াজুরি উপজেলা, যশোরের ঝিকরগাছা এবং পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় একজন করে নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

পটুয়াখালী

বাউফলে কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে বৃদ্ধা এবং বজ্রপাতে কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।

রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শুরু হওয়া ৩৫ মিনিট স্থায়ী ঝড়ে নদীতে পড়ে দুই জেলেও নিখোঁজ রয়েছে। ঝড়ে বাউফল উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

নিহত দুইজন হলেন- উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রায় তাঁতের কাঠি গ্রামের জহির সিকদারের ছেলে রাতুল শিকদার (১৪) ও দাশপাড়া ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের মৃত আহম্মেদ প্যাদার স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৮০)।

নিখোঁজ জেলেরা হলেন- চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চর অডেল এলাকার মন্নান ফরাজি ছেলে ইব্রাহিম ফরাজি এবং মনু রাঢ়ীর ছেলে ইসমাইল রাঢ়ী।

বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বশির গাজী বলেন, সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে ১১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী ঝড় হয়। এতে গাছের নিচে চাপা পড়ে বৃদ্ধা সুফিয়া বেগমের মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাতের শব্দে কিশোর রাতুলের মৃত্যু হয়।

তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ শিকার অবস্থায় ঝড়ের কবলে পড়ে ইব্রাহিম ফরাজি ও ইসমাইল রাঢ়ী নিখোঁজ রয়েছেন।

ইউএনও বলেন, বজ্রপাতে ২৫-৩০টি গরু মহিষ মারা গেছে। শতাধিক ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে শুনেছি। হাজার হাজার গাছ উপড়ে পড়েছে। শত শত কিলোমিটার বিদ্যুত সংযোগ ছিড়ে পড়েছে। বৈদ্যুতিক খুঁটিও উপড়ে পড়েছে। বর্তমানে উপজেলা বিদ্যুতবিহীন অবস্থায় রয়েছে। শিলা বৃষ্টিতে তরমুজসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

ইউএনও বলেন, নিহতদের দাফন-কাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের চাল ও টেউটিন দেওয়া হবে।


পিরোজপুর

ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে কয়েকশ ঘরবাড়ি। এ সময় গাছ পড়ে এক নারীর প্রাণ গেছে।

রোববার সকাল পৌনে ১০টার দিকে হঠাৎ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে ঝড় শুরু হয়। এতে পিরোজপুর পৌরসভা ও সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রশাসন ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

নিহত ২৫ বছর বয়সী রুবি বেগম সদর উপজেলার শারিকতলা ইউনিয়নের মরিচাল গ্রামের মীরাজ শেখের স্ত্রী।

ঝড়ের মধ্যে রুবির ঘরের উপরে গাছ পড়লে, তাতে চাপা পড়ে তার মৃত্যু হয় বলে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান।

স্থানীয়রা বলেন, সকালে হঠাৎ করেই আকাশ অন্ধকার হয়ে যায়। প্রায় ১৫ মিনিটের এ ঘূর্ণিঝড়ে পিরোজপুর পৌরসভা ও সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় শত শত গাছ উপরে পড়ে এবং ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বন্ধ হয়ে যায় সড়ক যোগাযোগ।

এ সময় রুবী বেগম নামে এ নারী নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন দুজন। এছাড়া সদর উপজেলায় বিদ্যুতের খুঁটির উপড় গাছ পড়ায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।

জেলা প্রশাসক জাহেদুর রহমান বলেন, হঠাৎ এ ঘূর্ণিঝড়ে সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা য়ায়নি।

ঝালকাঠি

রোববার সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ করে ঝড় শুরু হলে ঝালকাঠির আকাশ মেঘে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আসে। সেই সাথে বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে জেলার বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ভেঙে পড়ে।

বেলা ১১টার দিকে জেলার পৃথক এলাকায় বজ্রপাতে দুই নারী ও এক শিশু নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও একজন।

নিহতরা হলেন, হেলেনা বেগম (৪০), মিনারা বেগম (৩৫) ও মাহিয়া আক্তার ঈশানা (১১)।

ঝালকাঠি পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, সকালে বৃষ্টির মধ্যে মাঠে থাকা গবাদি পশুকে ঘরে আনতে যাওয়ার সময় বজ্রপাতের কবলে পড়ে পৃথক স্থানে তিনজন নিহত হয়েছেন।

১১ বছরের নিহত শিশু মাহিয়া আক্তার ঈশানার বাড়ি সদর উপজেলার ইছালিয়া গ্রামে। সে ওই গ্রামের রিকশাচালক বাচ্চু হাওলাদের মেয়ে এবং স্থানীয় আফছার মোমরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।

স্থানীয় ভ্যান চালক রুবেল হাওলাদার বলেন, রোববার সকাল সোয়া ১০টার দিকে আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হলে বাড়ির কাছেই বাধা গরু আনতে যায় মেয়েটি।

“এসময় বজ্রপাতের কবলে পড়ে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। গরুর বাছুরটিও ওই বজ্রপাতে মারা যায়।”

একই এলাকায় বজ্রপাতে আহত হন জলিল মুন্সির ছেলে ওয়াদুদ মুন্সি (২৯)। তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক টিএম মেহেদী হাসান সানি জানান, বজ্রপাতে আহত এক ব্যক্তিকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি শঙ্কামুক্ত আছেন।

অপর নিহত দুই গৃহবধূর মধ্যে হেলেনা বেগমের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেখেরহাট এবং মিনারা বেগমের বাড়ি জেলার কাঠালিয়া উপজেলার উত্তর তালগাছিয়া গ্রামে।

তারাও বৃষ্টিতে মাঠে থাকা গবাদি পশুকে বাড়ি আনতে গিয়ে বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন বলেছেন পরিবারের সদস্যরা।


নেত্রকোণা

বজ্রপাতে নেত্রকোণায় খালিয়াজুরী উপজেলার হাওরে এক কৃষক নিহত হয়েছেন।

রোববার বেলা পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার রাজঘাট হাওরে বজ্রপাতে এই নিহতের ঘটনা হয়।

নিহত ৫২ বছর বয়সী শহীদ মিয়া উপজেলার মেন্দীপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে।

নিহতের ভাই স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম জানান, সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে গ্রামের সামনে রাজঘাট হাওরে মরিচ ক্ষেতের পরিচর্যা করছিলেন তার ভাই। দুপুরের দিকে হঠাৎ বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয়।

“এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান আমার ভাই। এতে আমাদের গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।”

খালিয়াজুরী থানার ওসি উত্তম কুমার সাহা জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। নিহত শহীদ মিয়ার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


যশোর

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় ধান ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।

রোববার সকালে উপজেলার বড়পোদাউলিয়া গ্রামের বিলে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান ঝিকরগাছার শংকরপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য পোদাউলিয়া গ্রামের জাহান আলি।

নিহত আব্দুল মালেক পাটোয়ারী (৬০) উপজেলার বড়পোদাউলিয়া গ্রামের মৃত ওমর আলি পাটোয়ারীর ছেলে।

জাহান আলি বলেন, সকালে বাড়ির পাশের বিলে নিজের ধানক্ষেতে কাজ করতে গিয়েছিলেন আব্দুল মালেক। এ সময় বৃষ্টিপাতের সঙ্গে হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

“বৃষ্টি থামার পর অন্য কৃষকরা বিলে গেলে তাকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে।”

ভোলা

ভোলায় ঘূর্নিঝড়ে প্রায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে এবং বিপুল সংখ্যক গাছপালা উপড়ে পড়েছে; নিহত হয়েছে একজন।

রোববার দুপুরে সদর, মনপুরা ও লালমোহন উপজেলার ওপর দিয়ে এ ঝড় বয়ে যায় বলে ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান জানান।

নিহত ৬৮ বছর বয়সী হারেস আহমেদের বাড়ি লালমোহন উপজেলার ফরাসগঞ্জ ইউনিয়নে।

লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “ লালমোহন উপজেলার বদরপুর এলাকায় ভিক্ষা করার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে হারেস। এ সময় সে স্থানীয় মনির হোসেনের ঘরে আশ্রয় নেয়; সেখানে ঘর চাপায় সে মারা যায়। “

স্থানীয়রা জানান, ঝড়ে মনপুরা উপজেলার হাজির হাট ইউনিয়নের দাসেরহাট ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১০০ কাঁচা ঘরবাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অধিকাংশ ঘরের চাল ও বেড়া উড়ে গেছে। এ সময় মনুপরার দাসের হাটের মেঘনায় মাছ ধরা অবস্থায় ছয় জেলেসহ একটি ট্রলার ডুবে যায়। অন্য ট্রলারের সহায়তায় তাৎক্ষণিক সবাইকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও ট্রলারটি পাওয়া যায়নি। এছাড়াও ঝড়ে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন, তিন উপজেলায় ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ১৬ টন চাল তাৎক্ষণিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর নিহতের পরিবারকে নগদ ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে।

ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top