বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনার আশা দেখাচ্ছে কপ ২৬
জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনের (কপ ২৬) প্রথম সপ্তাহের আলোচনায় যতটুকু অঙ্গীকার পাওয়া গেছে, তাতে চলতি শতকের শেষে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনার আশা শেষ হয়ে যায়নি। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার হিসাবে, এসব প্রতিশ্রুতি বিবেচনায় নিলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে এই হার জলবায়ু সংকট এড়াতে যথেষ্ট নয় বলে অভিহিত করেছেন পরিবেশবাদী তরুণেরা। তাঁরা বলছেন, কপ ২৬ কোনো কাজে আসছে না, সুতরাং এটি বাতিল করা হোক।
গতকাল শুক্রবার স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে সম্মেলনকেন্দ্রে ‘লক্ষ্য ২০৩০’ (ডেস্টিনেশন ২০৩০) শিরোনামের এক প্যানেল আলোচনায় প্রথম সপ্তাহের দর-কষাকষির মূল্যায়ন তুলে ধরে হয়। এতে বলা হয়, তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার আশা জিইয়ে আছে এবং আগামী সপ্তাহে আরও কী কী করণীয়, সে বিষয়গুলোতেই নজর দেওয়া হবে। জাতিসংঘের দুজন প্রতিনিধি নাইজেল টপিং ও গঞ্জালি মুনোজ এবং কপ ২৬–এর প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা এই প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার দিনের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (আইইএ) নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরল বলেন, যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলো পূরণ হলে বিশ্বের বার্ষিক উষ্ণায়নের হার চলতি শতকের শেষে ১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়াবে। কয়লাবিদ্যুতে নতুন বিনিয়োগ না করার বিষয়ে ৪০টি দেশের সমঝোতা এবং বন উজাড়ীকরণ বন্ধে শতাধিক দেশের চুক্তি, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের হালনাগাদ জাতীয় পরিকল্পনার (এনডিসি) আলোকে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে বলা হচ্ছে। কপ ২৬–এর প্রাক্কালে আইইএর সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, বর্তমানে যে হারে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ঘটছে, তাতে শতাব্দী শেষে উষ্ণায়নের মাত্রা ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাবে।
পরিবেশবাদী আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে কথা উঠেছে, জলবায়ু সংকট এড়াতে সনদে অংশগ্রহণকারীদের আলোচনার এই বর্তমান কাঠামো কাজে আসছে না। সুইডিশ আন্দোলনকারী গ্রেটা থুনবার্গ বৃহস্পতিবার এক প্রতিবাদসভায় বলেছেন, ‘কপে আমাদের কথা বলার সুযোগ নেই, সেখানে যাঁরা কথা বলছেন, তাঁরা আমাদের কথা বলছেন না। তাই কপের বিকল্প দরকার।’ গ্লাসগোতে নিউইয়র্ক টাইমস–এর এক অনুষ্ঠানে গ্রেটা আরও অভিযোগ করেছেন যে জলবায়ু সম্মেলন এখন ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের গ্রিনওয়াশিংয়ের আয়োজনে রূপান্তরিত হয়েছে। পরিবেশবান্ধব পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের কাজে জলবায়ুর ক্ষতিসাধন আড়াল করার যে চেষ্টা চালায়, তাকে গ্রিনওয়াশিং বলা হয়।
ফ্রাইডেস ফর ফিউচার নামে গ্লাসগোর কিশোর-তরুণদের একটি সংগঠনের ডাকে গতকাল গ্লাসগোর স্কুলছাত্ররা ধর্মঘট ও বিক্ষোভে অংশ নেয়। স্কুলের শিশু-কিশোরদের সঙ্গে তাদের মা–বাবা, এমনকি তাদের প্রপিতামহদের অনেককে বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা যায়। শহরের কেন্দ্রস্থল জর্জ স্কয়ারে অনুষ্ঠিত হয় তাদের সমাবেশ, যাতে গ্রেটা থুনবার্গ এবং কেনিয়ার কিশোরী ভেনেসা নাকাতে বক্তৃতা করে। বিক্ষোভের কারণে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের সম্মেলনকেন্দ্রে যাওয়া-আসার জন্য বিকল্প পথ ব্যবহার করতে হয়। আজ শনিবারও শহরটিতে প্রতিবাদ কর্মসূচির কথা রয়েছে, যাতে ৫০ হাজার বিক্ষোভকারী অংশ নেবেন বলে কর্তৃপক্ষের ধারণা।
তরুণদের এই ক্ষোভের বিষয়ে বিবিসি জানায়, যুবরাজ চার্লস বলেছেন, তাঁকেও বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে এবং তিনি তরুণদের দাবি সমর্থন করেন, তবে মিছিলে অংশ নেওয়া তাঁর জন্য কঠিন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক দূত জন কেরিও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের গতি শ্লথ হওয়ায় অনেকের মতো তিনিও হতাশ। সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচিতেও গতকাল তরুণ পরিবেশবাদীদের একটি অংশ অংশগ্রহণ করে। ইউএনএফসিসিসির সহযোগী ইয়ংগোর প্রতিনিধিরা ৪০ হাজার তরুণের মতামতসংবলিত একটি বিবৃতি মন্ত্রীদের উদ্দেশে তুলে ধরেন। সম্মেলনজুড়েই এখন তরুণদের এই ক্ষোভের কথা আলোচনায় আসছে।
এদিকে গ্রিনহাউস গ্যাস উদ্গিরণে ধনীদের বিলাসিতা কতটা দায়ী, তা সামনে এনেছে দাতব্য সংস্থা অক্সফাম। অক্সফামের হয়ে ইনস্টিটিউট অব ইউরোপিয়ান এনভায়রনমেন্টাল পলিসি (আইইইপি) এবং স্টকহোম এনভায়রনমেন্ট ইনস্টিটিউটের (এসইআই) করা এক যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৫০ শতাংশ দরিদ্র মানুষ মাথাপ্রতি যতটা গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি করেন, ১ শতাংশ শীর্ষ ধনীরা করেন তার ৩০ গুণ বেশি। তাঁদের ব্যক্তিগত বিমান, বিলাসবহুল মেগাইয়ট এবং মহাকাশযাত্রার বিলাসিতায় এই গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন ঘটে। কপ ২৬–এ অংশ নিতে বিভিন্ন দেশের নেতাদের বিশেষ বিমান ব্যবহার এবং আমাজনের জেফ বেজোসের মতো শীর্ষ ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত বিমান ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো।
সূত্রঃ প্রথম আলো
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: