প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের এক অনন্য আঁধার আমাদের এই মাতৃভূমি বাংলাদেশ। আমাদের দেশে আছে অপরূপা সৌন্দর্যে ভরা চোখ জুড়ানো অনেক স্থান। যেখানে সারা বছর জুড়ে ভিড় লেগে থাকে নানা পর্যটকদের। এমনি এক স্থানের নাম হচ্ছে সাজেক ভ্যালি ও খাগড়াছড়ি।
প্রায় প্রতিটি ঋতুতে সাজেক সজ্জিত হয় নানা রুপে। সাজেক! যেখানে গেলে মনে হবে সে নিউজিল্যান্ডে আছে। অবাক লাগছে?হ্যা, ঠিক এভাবেই সাজানো হয়েছে সাজেকের প্রতিটি মুহূর্ত। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার পথে নিচে বর্ণিত এমন আরও অনেক দর্শনীয় স্থান খুজে পাওয়া যায় যা পৃথিবীর সকল দর্শনার্থীদের মন ও প্রান কাড়ে!
হাজাছড়া ঝর্না
হাজাছড়া ঝর্নাটি এখানে রিছাং নামেই বেশ পরিচিত। যাত্রা শুরু এই ঝর্নার পথ ধরে। বেশ খানিকটা খাড়া ঢাল, তবে ঢাল খাড়া হওয়ার পরও নিচে নামতে তেমন কোনও কষ্ট হয় না। ঝর্নার সামনে যাওয়া মাত্র ঝিরিঝিরি পানির ছটা শরীরে এসে লাগলে,অদ্ভুত এক ভালো লাগা হৃদয় ছুঁয়ে যায়।মাঝখানে সুবর্ণ গতিতে পানির বয়ে চলা আর চারপাশটা সবুজে বিস্তৃত ঘেরা বনভুমি। এর যতোই গভীরে যাওয়া যায় ততোই গভীর অরণ্যের দেখা মিলবে।
বৌদ্ধ বিহার
রিছাং বা হাজাছড়া ঝর্নাটি পার হলেই আলোক নবগ্রহ ধাতু চৈত্য বৌদ্ধ বিহার। আলোক টিলাটির বাহিরে আশেপাশে খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং ভিতর দিয়ে গেলে দেখে মনে হবে একটু আগে কেউ একজন এসে একে সোনালী রং করে গেছে। সেখানকার হিন্দু আদিবাসীরা এখানে এসে প্রার্থনা করেন। চকচকে ও ধকধকে এই মন্দিরটি দূর থেকে দেখে যে কারো সবার নজর কাড়বে। যারা ছবি তুলতে চান তাদের জন্য এই স্থানটি হবে আদর্শ স্থানগুলোর মধ্যে একটি।
আলুটিলা গুহা
বৌদ্ধ বিহার থেকে খানিকটা পথ দূরে অবস্থিত এই আলুটিলা গুহা। বৌদ্ধ বিহার থেকে হেঁটেই যাওয়া যায় এ গুহায়। টিকেট কেটে ও হাতে মশাল জ্বালিয়ে এ গুহার ভিতর প্রবেশ করতে হয়। গুহার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ততে পৌছাতে সময় লাগবে প্রায় ১০ থেকে ১২ মিনিট।
সম্পূর্ণ গুহাটির ভিতরটায় ঘুটঘুটে অন্ধকার। মশাল এর আলো না থাকলে ভিতরে একজন আরেকজন কে দেখতে পারবে না। মশাল এর আলোয় গুহার ভিতর হালকা আলোয় আলোকিত হয়। গুহাটির ভিতর এতটাই নির্জন যে এখানে হাঁটার পায়ের আওয়াজ স্পষ্ট কানে ভেসে বেড়ায়। যতোই এর গহীনে যেতে থাকবে ততোই এক ভুতুড়ে ভাব! তবু মজার ব্যাপার হচ্ছে পর্যটকরা ভয়ংকর এই পথগুলো পাড়ি দিয়ে প্রতি বছর এখানে এসে ভিড় জমায় শুধু মাত্র একবার নিজ চোখে এই অপার সৌন্দর্যকে উপভোগ করবে বলে।
আবার কোথাও কোথাও হাঁটু অব্দি জল! এখানকার আদিবাসিদের কাছে গুহাটি রহস্যময় গুহা নামে পরিচিত। নামটির সাথে গুহার ভিতরগত বৈশিষ্ট্য অনেক মিল পাওয়া যায়।আসলেই বিশাল রহস্যে ঘেরা এই আলুটিলা গুহা।
কমলক ঝর্না
সাজেকের রুইলুই পাড়া থেকে মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার ব্যবধানে ঘুরে আসতে পারেন সুন্দর এই কমলক ঝর্না থেকে। এই ঝর্নাটি অনেকের কাছে পিদাম তৈসা ঝর্না বা সিকাম তৈসা ঝর্না নামে পরিচিত। কমলক ঝর্ণা যা দেখে মনে হবে কোনো এক সবুজ ছায়াতল থেকে শুভ্র পরী উপর থেকে নীচে বেয়ে নামছে!
আর এই শুভ্র পানি যদি স্নিগ্ধ বাতাসে আমাদের শরীরকে শীক্ত করে তাহলে কার না ভালো লাগবে? তাই যারা মেঘকে ছুতে আঁকাবাঁকা পথের উদ্দেশ্যে সাজেক যেতে চান তারা অবশ্যই যাওয়ার পথে কোমলক ঝর্ণা দেখার স্বাদ নিয়ে নিবেন।
পশ্চিমের গ্রাম!
প্রায় ঘণ্টা খানেক হাঁটার পর ভারতের লুসাই পাহাড়ের উপর একটা গ্রাম!!! গ্রামের নাম কংলাক। তিনটি লুসাই জনগোষ্ঠী দ্বারা গঠিত এই কংলাক পাড়া। এর হেড ম্যান চৌমিংথাই লুসাই। কংলাক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায়। যেখান থেকে উৎপন্ন হয়েছে কর্ণফুলী নদী।
পাহাড়ের উপর অসাধারন একটা জনবসতি। চমৎকার সুন্দর ও অতি সাধারন একটি গ্রাম এই কংলাক। গ্রামের মানুষগুলো অসাধারন ও অতি মিশুক প্রকৃতির। তারা খুব আপন প্রকৃতির ও অনেক অতিথি পরায়ন ও বটে।
কংলাক গ্রাম থেকে সাজেকের রুইলুই পাড়ার দৃশ্য অতি মনোরম , দূর থেকে লাল ,নীল, ঘরগুলো পোস্টারের মতো লাগছিল! আসলে সাজেক এর অপরূপ এই সৌন্দর্য শুধু মাত্র কংলাকে আসলেই দেখা যায়। মূলত সাজেক আসার মূল রহস্য এই কংলাক গ্রামটি।
শীতে পাহাড়ের চূড়া যখন হালকা কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে তখন বসন্তের শেষ বিকাল পেরিয়ে পশ্চিমের আকাশ বিদায়ি সোনার সিংহ সূর্য দেবতা সম্পূর্ণ হেলে পড়ার সেই অপূর্ব দৃশ্যটি দেখা মিলে শুধু মাত্র এই কংলাক গ্রামটিতে। বলতে গেলে কংলাকে দাঁড়ালে সাজেকের পুরো সৌন্দর্য একসাথে দেখা যায়। প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত আমাদের এই কংলাক গ্রামটি।
শিব মন্দির
সাজেকের প্রবেশ মুখের হাতের ডান পাশে অবস্থিত সুপ্রাচীন এই শিব মন্দির। মূলত মন্দিরটি সকলে রুইলুই পাড়া শিব মন্দির নাম চিনে থাকে। প্রথম থেকে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত খুব পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন ও খুব আয়োজিত। দেখলেই মন ভরে যায়। এখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সবসময় হৈহুল্লোড় ও হট্টগোল লেগেই থাকে।
মন্দির পেরুলেই সামনে দোকানিরা বেচাকেনায় ভিড় জমে যায়। বিভিন্ন প্রকার দেশি ও বিদেশী পণ্য ক্রয় বিক্রয় হয় এই দোকানগুলোতে।
সকালে কটেজের বারান্দায় দাড়িয়ে দেখা যায় নীচের পাহাড় গুলো সাদা মেঘের ভিড়ে হারিয়ে গেছে। দূরে উঁচু উঁচু পাহাড়ের চূড়া দ্বিপের মতো করে তাদের অস্তিত্ব জানান দেয়।মুলত সেগুলোই হচ্ছে ইন্ডিয়ান মিজোরাম পাহাড় ! মাঝখানে মেঘের বিশাল সমুদ্র।
আদিবাসি বলতে মূলত ত্রিপুরা আর লুসাই জাতির বসবাস এই সাজেকে। যদিও শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে লুসাইরা ত্রিপুরাদের থেকে বেশ এগিয়ে। আসলে মিজোরামের লুসাই পাহাড়কে কেন্দ্র করে লুসাই জাতি গোষ্ঠীর এগিয়ে চলা।
সূত্রঃ প্রকৃতির রাজ্য
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: