৫০ কোটি বছর পুরনো মলাস্ক-এর পূর্বপুরুষের খোঁজ মিলল চীনে
সম্প্রতি ৫০ কোটি বছর পুরনো মলাস্কা প্রজাতির প্রাণীর পূর্বপুরুষদের খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
‘শিশানিয়া অ্যাকুলেটা’ নামের বিস্ময়কর এ প্রজাতির নতুন জীবাশ্মের খোঁজ পেয়েছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড’ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা।
এ গবেষণায় মলাস্কার শুরুর দিকের বিবর্তনের ওপর নজর দেওয়া হয়েছে, যে প্রজাতির মধ্যে শামুক, স্কুইড ও অক্টোপাসের মতো প্রাণীগুলো অন্তর্ভুক্ত।
এইসব জীবাশ্মের সন্ধান মিলেছে দক্ষিণ চীনের পূর্ব ইউনান প্রদেশের আদিম ক্যামব্রিয়ান যুগের বিভিন্ন পাথরে, যা প্রায় ৫১ কোটি ৪০ লাখ বছর পুরোনো।
‘শিশানিয়া অ্যাকুলেটা’ এক ধরনের ছোট আকৃতির প্রাণী, যার কোনও খোলস না থাকলেও শিকারীদের হাত থেকে বাঁচতে এদের দেহে ‘চিটিন’ নামের রাসায়নিক উপাদান দিয়ে তৈরি এক ধরনের কাঁটাওয়ালা বর্ম রয়েছে। বর্তমানে কাঁকড়া, পোকামাকড় ও কিছু মাশরুমের শাঁসে এ উপাদানটির দেখা মেলে।
শিশানিয়া’র জীবাশ্ম, যা মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার লম্বা, তা মলাস্কের পূর্বসূরী সম্পর্কে এক রোমাঞ্চকর ধারণা দেয়, যেখানে বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ মলাস্কের দেহে খোলস থাকলেও শিশনিয়া’র ক্ষেত্রে এমন ছিল না।
এর পরিবর্তে শিশানিয়া’র একটি পেশীবহুল পা ছিল, বর্তমানে দেখতে পাওয়া বিভিন্ন স্লাগের মতো। এই পা ব্যবহার করে প্রাচীন সমুদ্রতলে ঘুরে বেড়াত এরা। আর এদের দেহের নিচের অংশ একেবারে নগ্ন ছিল, যা থেকে তাদের আদিম রূপবৈচিত্র্য ফুটে ওঠে।
সে তুলনায় বর্তমান সময়ের মলাস্কগুলো বিস্ময়করভাবে বৈচিত্র্যময় হয়ে থাকে, যার মধ্যে রয়েছে শামুক থেকে শুরু করে স্কুইড এমনকি অক্টোপাসের মতো বুদ্ধিমান প্রাণীগুলো।
এই বৈচিত্র্যের শুরু হয়েছিল ক্যাম্ব্রিয়ান যুগের বিস্ফোরণের সময়। এটি দ্রুত বিবর্তনীয় পরিবর্তনের এমন এক যুগ, যেখানে সকল প্রধান গোষ্ঠীর প্রাণীগুলো বিবর্তিত হতে শুরু করে। সে সময়ের বিভিন্ন জীবাশ্মের ধরন বেশ বিরল হওয়ায় শিশানিয়া অ্যাকুলেটারের মতো মলাস্কের বিবর্তন বোঝার বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
‘ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড’-এর সহযোগী অধ্যাপক লুক প্যারির ব্যাখ্যা অনুসারে, শিশানিয়া নিয়ে গবেষণার বিষয়টি বিজ্ঞানীদের বুঝতে সহায়তা করেছে, মলাস্কের সাধারণ পূর্বপুরুষ না আগেকার যুগের বিভিন্ন মলাস্ক দেখতে দেখতে কেমন হতে পারে।
এর জীবাশ্ম থেকে ইঙ্গিত মেলে, শুরুর দিকের মলাস্ক আসলে কাটাওয়ালা স্লাগ প্রজাতির প্রাণী ছিল, যা পরবর্তীতে গিয়ে বিবর্তিত হয়েছে এখন দেখতে পাওয়া বিভিন্ন ‘শেলড’ বা আবরণযুক্ত মলাস্কে।
এ যুগান্তকারী উদ্ভাবনের পেছনে কাজ করেছেন ‘ইউনান ইউনিভার্সিটি’র ড. গুয়াংজু ঝাং। শুরুতে তিনি ভেবেছিলেন, এইসব জীবাশ্ম তেমন প্রাসঙ্গিক নয়। তবে, ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করার পর এদের মধ্যে বিশেষ এক ধরনের কাটাওয়ালা কাঠামো দেখতে পান তিনি।
পরবর্তীতে এটি নিয়ে পরীক্ষাগারে আরও বিশ্লেষণ করার পর ঝাং নিশ্চিত হন, এগুলো আসলে আদিম মলাস্ক ছিল।
অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে শিশানিয়া’র মেরুদণ্ড পরীক্ষা করার পর এদের গঠনপ্রক্রিয়া সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে, যেখানে এর ভেতরে ছোট খালের মতো বিশেষ ধরনের ব্যবস্থা ছিল।
এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, এগুলো ‘মাইক্রোভিলি’র মাধ্যমে লুকায়িত অবস্থায় ছিল, কিছু অমেরুদণ্ডী প্রাণীর দেহের শক্ত অংশ যেভাবে গঠিত হয়, ঠিক সেরকমই। আর এ প্রক্রিয়াকে তুলনা করা যেতে পারে প্রাকৃতিক থ্রি ডি প্রিন্টারের সঙ্গে, যা প্রাণীর প্রতিরক্ষা বা চলাচলের জন্য শক্ত অংশ গঠনে সহায়ক।
‘মাইক্রোভিলি’ হচ্ছে কোষের মধ্যে থাকা এমন এক কাঠামো, যা পুষ্টি সংগ্রহের কাজ করে থাকে।
এদিকে, বর্তমান সময়ের কিছু কিছু মলাস্কে ‘চিটন’-এর মতো শক্ত মেরুদণ্ড ও ক্যালসিয়াম কার্বনেট দিয়ে তৈরি শক্ত লোম থাকলেও শিশনিয়ার মেরুদণ্ড গঠনে কাজ করেছে প্রাকৃতিক চিটিন। এ বৈশিষ্ট্যের কারণে শিশনিয়ার যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায় ‘ব্র্যাকিওপড’ ও ‘ব্রায়োজোয়ান’-এর মতো অন্যান্য প্রজাতির প্রাণীর সঙ্গে, যা একই ধরনের কাঠামো থেকে তৈরি।
এ গবেষণার সহ-লেখক ও ‘ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটি’র গবেষক জ্যাকব ভিন্থার জোর দিয়ে বলেন, মলাস্ক প্রজাতির প্রাণীর দেহে খোলস বিকাশের আগে এর বিবর্তনের বিরল চেহারা ফুটিয়ে তোলে শিশনিয়া। আর নরম দেহওয়ালা মলাস্কের জীবাশ্ম পাওয়ার নজির খুব সীমিত হওয়ায় ইউনান প্রদেশের এই অনুসন্ধান বিশেষভাবে মূল্যবান।
বিষয়: মলাস্ক শিশানিয়া অ্যাকুলেটা ইউনান
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: