ঢাকা রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১


দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের নানা প্রভাবের কথা জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর


প্রকাশিত:
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:১৮

আপডেট:
২৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০৪

দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের নানা প্রভাবের কথা জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নানা প্রভাব এখন মোকাবিলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।

এর ব্যাখ্যা দিয়ে আজিজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। বর্ষা আসছে দেরিতে, যাচ্ছেও দেরিতে। দেশে তাপপ্রবাহের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আবার শীতের মধ্যেও তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা দেখছি।’

আজ মঙ্গলবার আবহাওয়া অধিদপ্তর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মো. আজিজুর রহমান এসব কথা বলেন। রাজধানীর বিজয় সরণির বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরের মিলনায়তনে আজ সকালে এই অনুষ্ঠান হয়। সেখানে ‘বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল জলবায়ু: আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণে ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের প্রবণতা এবং পরিবর্তন’ শীর্ষক এ গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।
গত ৪৩ বছরের আবহাওয়ার নানা পরিবর্তনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই গবেষণায়। এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিস্থিতির পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ ও নরওয়ের আরও পাঁচজন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ। বছরের চারটি সময় ধরে এসব তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সেগুলো হলো—শীতকাল (ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি), প্রাক্‌-বর্ষা (মার্চ, এপ্রিল ও মে) বর্ষা (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) এবং বর্ষা-পরবর্তী (অক্টোবর ও নভেম্বর)।

গবেষণার তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে দেশে। বর্ষা আসার সময় পাল্টেছে। বিলম্ব হচ্ছে চলে যেতেও। শুধু বর্ষা নয়, শীত বা গ্রীষ্মেও বেড়ে যাচ্ছে তাপ। মেঘাচ্ছন্ন দিনের পরিমাণ বাড়ছে। তাতে শীতের দিন তাপ বাড়লেও শীতের তীব্রতার অনুভূতি হচ্ছে বেশি মাত্রায়। এর সঙ্গে বাড়ছে বায়ুদূষণ।


আজিজুর রহমান আরও বলেন, নরওয়ের সরকার ১৩ বছর ধরে আবহাওয়াসংক্রান্ত গবেষণায় বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরকে সহায়তা করছে। আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রবণতা বুঝতে সেই সহায়তা খুব কার্যকর হয়েছে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিক্টার সেভেন্ডসন বলেন, ‘আমাদের একটাই পৃথিবী।

জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব থেকে আমরা কেউ মুক্ত থাকতে পারব না। বাংলাদেশ বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। আবহাওয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে কার্যকর বৈজ্ঞানিক গবেষণা, তথ্য–উপাত্তের ব্যবহার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের জন্য সহায়ক হবে।’

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ভবিষ্যতেও সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন রাষ্ট্রদূত।

জলবায়ু পরিবর্তন যে ভয়ানক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে, তা থেকে রক্ষা পেতে ভবিষ্যতের জন্য কোনো কিছু ফেলে রাখার কোনো অবকাশ নেই বলে মনে করেন নরওয়ের আবহাওয়া দপ্তরের জলবায়ু বিভাগের প্রধান হ্যান্স অলিভ হাইজেন। ব্যবস্থা এখনই নিতে হবে বলে জানান তিনি।
গবেষণায় পাওয়া তথ্য–উপাত্ত তুলে ধরে হ্যান্স অলিভ হাইজেন বলেন, রাজশাহীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাপপ্রবাহ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ভবিষ্যতে বৃষ্টির সময়ও কমে আসতে পারে। হঠাৎ অস্বাভাবিক বৃষ্টি হতে পারে। এমন বৈরী পরিস্থিতি কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের জন্য শঙ্কার বিষয়।

শুধু গবেষণার পরিসংখ্যান নয়, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার প্রভাব প্রতিনিয়ত টের পাচ্ছেন বলে জানান অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন ফাতিমা আকতার। তিনি বলেন, ‘এর প্রভাব আমাদের কৃষি এবং জীববৈচিত্র্যের ওপর পড়ছে। আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা, অবকাঠামো ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে ভবিষ্যতে।’ এসব মোকাবিলায় কর্মপন্থা নির্ধারণে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এই গবেষণা তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে বলে মনে করেন তিনি।

গবেষণায় তাপমাত্রার পরিবর্তন বুঝতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৩৫টি স্টেশনের ১৯৮০ থেকে ২০২০ সালের প্রতিদিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দেখা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন ঋতুতে তাপমাত্রার পরিবর্তনের দিকটি উঠে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, ক্রমেই জলবায়ু পরিস্থিতি উষ্ণ হচ্ছে। সব ঋতুতেই তাপমাত্রা আগের চেয়ে বাড়ছে।

ঢাকার তাপমাত্রার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ৪০ বছরে দেখা গেছে প্রাক্‌–বর্ষা, বর্ষা ও বর্ষা-পরবর্তী—তিন সময়েই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৯, শূন্য দশমিক ৩৩ এবং শূন্য দশমিক ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। শুধু শীতকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে গেছে শূন্য দশমিক ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে চারটি কালেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়েছে।

দেখা গেছে ঢাকাসহ আট বিভাগেই বর্ষাকালে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়েছে। এর মধ্যে খরাপ্রবণ রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে, শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টিবহুল সিলেটেও এ সময় তাপমাত্রা বেড়েছে একই রকম মাত্রায়। ঢাকা, রংপুর ও চট্টগ্রামে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির এ হার ছিল শূন্য দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top