ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


ভূমিদস্যুদের গ্রাস থেকে করতোয়াকে বাঁচাতে হবে


প্রকাশিত:
২২ অক্টোবর ২০১৯ ০৭:০৬

আপডেট:
১৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:১৬

ফাইল ছবি

পরিবেশ টিভি: করতোয়া বেঁচে থাকুক—এটা বগুড়াবাসীর প্রাণের দাবি। ভূমিদস্যুদের রাহুগ্রাস থেকে করতোয়াকে বাঁচাতে হবে। একসময়ের খরস্রোতা করতোয়া এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। দখল-দূষণে সরকারি–বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে।

আজ সোমবার বগুড়া পৌরসভায় মিলনায়তনে করতোয়া নদী নিয়ে ‘কমিউনিটি কনসালটেশন’ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘করতোয়া নদীবিষয়ক আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন ও বর্তমান প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে বগুড়ার বিভিন্ন স্তরের লোকজন অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান।

অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি ছিলেন বগুড়া পৌরসভার মেয়র এ কে এম মাহবুবর রহমান। তিনি বলেন, করতোয়া নদীর রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে। নদীর সীমানা পিলার দিয়ে চিহ্নিত করতে হাইকোর্টের নির্দেশ পৌরসভা এখন পালন করছে। ইতিমধ্যে ১০০ পিলার দিয়ে সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে।

স্বাগত বক্তব্য দেন বেলার রাজশাহী কার্যালয়ের সমন্বয়কারী তন্ময় কুমার সান্যাল। সঞ্চালক ছিলেন বেলার হেড অব প্রোগ্রামস মো. খোরশেদ আলম। অনুষ্ঠানের শুরুতে নদী নিয়ে দেওয়া হাইকোর্টের আদেশের ওপর স্বাগত বক্তব্য দেওয়া হয়। এরপর উন্মুক্ত আলোচনা হয়।

আলোচনায় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নিভা রানী সরকার বলেন, গত মার্চ মাসে জেলা প্রশাসন করতোয়ার দখলদারদের উচ্ছেদের নামে প্রহসন করেছে। নদীর পাড়ে গরিব মানুষের ছোট ছোট টিনের ঘর উচ্ছেদ করেছে। অথচ রাঘববোয়ালেরা নদীর জায়গা নাকি ইজারা নিয়েছেন। সেই জায়গায় প্রশাসনের কোনো নজর নেই।

করতোয়া নদীর পাড়ের নাটাইপাড়ার বাসিন্দা আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘করতোয়া শত শত দখলদার আছে। এই বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের কেউ এতে মাথা ঘামায় না। কারণ, করতোয়া তো তাদের নয়। করতোয়া আমাদের। আমাদেরই বাঁচাতে হবে।’

সরকারি আজিজুল হক কলেজের পরিবেশবাদী সংগঠন তীরের সাবেক সভাপতি মিজান বলেন, সরকারি নজর থাকলে সব সম্ভব। এর মধ্যে বুড়িগঙ্গা দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। সরকার চাইলে করতোয়ার দখলদারদের উচ্ছেদ করা সম্ভব।

শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের করতোয়া নদীর পাড়ের বাসিন্দা মোছা. রওশক আরা বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে নদী দখলের হুড়োহুড়ি চলছে। অন্য দেশের মানুষ দিন দিন সভ্য হচ্ছে। আমরা ক্রমাগত নদী দখল করছি। পৌরসভা নদী দূষণ করছে, প্রশাসন দখল করছে। সবাই মিলে করতোয়াকে খাল বানানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। মাঝেমধ্যে শোনা যায়, একটি বেসরকারি সংস্থা নদীর পথ ঘুরিয়ে দেবে। অথচ প্রশাসন সেখানে নীরব।’

সভাপতির বক্তব্যে জিয়াউর রহমান বলেন, কার্যত নদীর দখলদারদের উচ্ছেদে বগুড়ায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়নি। সে কারণে এখন নদীপাড়ের বাসিন্দারাও নদী দখলে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে হবে।

বেলার কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, করতোয়া নদী রক্ষায় পৌরসভাকে দায়িত্ব নিতে হবে। তদারকি করতে হবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়। খেলায় রাখতে হবে, কোনো বর্জ্য যেন নদীতে ফেলা না হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর—সবার দায়িত্ব নদীকে রক্ষা করা। কিন্তু কষ্টের বিষয়, নদীর কান্নার শব্দ এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের কানে পৌঁছায় না।

জেলা প্রশাসন বলছে, চলতি বছরের ২৮ মার্চ বগুড়ার করতোয়া নদীর অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এ সময় করতোয়া নদীর অবৈধ ৩০ দখলদারের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার কথা ছিল। তবে আইনি জটিলতার কারণে দুটি ‘দখলদার’ বাদ দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top