ঢাকা সোমবার, ৯ই ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১


প্রাকৃতিক উপায়ে মাটির উর্বরতা সংরক্ষণ


প্রকাশিত:
১৮ অক্টোবর ২০১৯ ০১:১৪

আপডেট:
৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৪৬

ফাইল ছবি

পরিবেশ টিভি: মাটি একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। এটি পৃথিবীর অধিকাংশ জীবের খাদ্য উৎপাদন এবং বসবাসের মাধ্যম। মাটিকে কেন্দ্র করে সব কৃষিকাজ আবর্তিত হয়। ফসল উৎপাদনে মাটির উপযুক্ত বিকল্প নেই। কৃষি প্রধান এ বাংলাদেশে প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ খুব একটা বেশি নেই। ফলে এদেশের অধিকাংশ মানুষের জীবিকা কৃষি, যা মৃত্তিকা সম্পদের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল।

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের ভাগ্যের সাথে জড়িত সোনার চেয়ে দামি এ মৃত্তিকা সম্পদ। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে এ মৃত্তিকার উর্বরতা আজ হুমকির সম্মুখীন। এক সমীক্ষায় জানা গেছে বাংলাদেশের ৯০ লাখ হেক্টর কৃষি জমির শতকরা ৭৫  ভাগ তার উর্বরতা হারিয়েছে। অধিকমাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহারই এর প্রধান কারণ বলে ওই সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এর বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গত ঠিক এক দশকে বাংলাদেশে আবাদযোগ্য জমির মাটির উর্বরতার মাত্রা শতকরা ২.৫ থেকে নেমে শতকরা ১.৫ এসে দাঁড়িয়েছে। এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর আবাদযোগ্য জমির শতকরা অর্ধেকই তার উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়েছে। এর ফলে প্রতি বছর প্রায় এক হাজার কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হচ্ছে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি যৌথভাবে এই সমীক্ষা চালায়। দৰিণ এশীয় অপরাপর দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে জমির উর্বরতা হ্রাস পরিস্থিতি আশংকাজনক। জমিতে অধিক মাত্রায় ও নির্বিচারে রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলেই মাটির উর্বরতা শক্তি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। অপরদিকে একই জমিতে  এভাবে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, মাটির অম্লত্ব পরিবর্তিত হচ্ছে, পানি ধারণক্ষমতা কমে যাচ্ছে ও অনুজীবের কার্যাবলী ব্যাহত হচ্ছে। এতে মাটির উৎপাদনশীলতা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।

ফসল উৎপাদনের সঙ্গে মাটির উর্বরতা ও উৎপাদিকা ক্ষমতার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। মাটির উর্বরতা বলতে ফসল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান সমূহ সরবরাহের ৰমতাকে বুঝায়। অর্থাৎ মাটিকে তখনই উর্বর বলা হবে যখন তাতে কোন উদ্ভিদের পরিপূর্ণ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সব খাদ্য উপাদান সঠিক পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। উদ্ভিদের বৃদ্ধি, পুষ্টি ও ফলনের জন্য ১৬ টি খাদ্য উপাদন অত্যাবশ্যক। সাধারণভাবে এগুলোকে অপরিহার্য খাদ্য উপাদান বলা হয়।

উদ্ভিদ পুষ্টি বিজ্ঞানী ডি আই আরননের মতে, অপরিহার্য খাদ্য উপাদান হচ্ছে ১৬টি, যথা- কার্বন, হাইড্রোজেন, অঙিজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, গন্ধক, ম্যাঙ্গানিজ, লৌহ, মলিবডেনাম, দসৱা, বোরন, ক্লোরিন ও তামা। এ উপাদানগুলোর মধ্যে তিনটি উপাদান যেমন- কার্বন, হাইড্রোজেন ও অঙিজেন, উদ্ভিদ, পানি ও বায়ু থেকে গ্রহণ করে এবং বাকি তেরটি খাদ্য উপাদান মাটি থেকে গ্রহণ করে থাকে। অনুর্বর মাটিতে ফসলের ফলন হয় কম, আর উর্বর মাটিতে ফলন হয় আশাব্যঞ্জক। সুতরাং অধিক উৎপাদন পেতে হলে মাটির উর্বরতা শক্তি বজায় রাখতে হবে।

উদ্ভিদের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদানগুলোর মধ্যে নাইট্রোজেন একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান। এর অভাব হলে গাছ বাড়তে পারে না, নিচের পাতাগুলো হলুদ হয়ে যায়, প্রোটিন সংশ্লেষণ কমে যাওয়ায় কোষ বিভাজন তথা কোষের বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে। এতে ফসলের নানারূপ লক্ষণ ও প্রতিক্রিয়া দেখা যায় এবং ফলন কমে যায়। উদ্ভিদ নাইট্রোজেন গ্রহণ করে প্রধানত মাটি অথবা সার থেকে। পৃথিবীর প্রায় সব মাটিতে নাইট্রোজেনের অভাব পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশের মাটিতে এই নাইট্রোজেনের অভাব  প্রকট। মাটির এ ঘাটতি পূরণে ইউরিয়া (বা এ্যামোনিয়াম সালফেট) সার ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, শ্রমিক মজুরি, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থার অভাব ইত্যাদির ফলে রাসায়নিক সারের মূল্য উত্তরোত্তর বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে এই সারের মূল্য স্বাধীনতা উত্তর দামের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি, ফলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের ক্রয় ক্ষমতার প্রায় বাইরে চলে গেছে।

 




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top