ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০


বর্ষার আগেই যমুনা নদীর বাম পাশের তীরে প্রবল ভাঙনে দিশেহারা চরাঞ্চলের মানুষ


প্রকাশিত:
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১০:৫৬

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১৮:৩৪

এ বছর বর্ষা শুরুর আগেই নতুন করে যমুনা নদীর বাম পাশের তীরে প্রবল ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের লোকজন। অনেকের বসতভিটা ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। এখনো যাদের ঘরবাড়ি নদীর তীরে আছে, তারা আছেন আতঙ্কে। কারণ, যেকোনো সময় বসতঘর ও জমি নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ভাঙনকবলিত চরের মানুষ। 

এদিকে, ভাঙন রোধে সারিয়াকান্দি উপজেলার পাকেরদহ থেকে কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের শনপচা পর্যন্ত ৬ দশমিক ২৫ কিলোমিটার যমুনা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প বা বাঁধ নির্মাণকাজের ধীরগতিতে হতাশ যমুনার তীরবর্তী চরাঞ্চলের মানুষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বর্ষা মৌসুমে যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়েছে চরের অন্তত ১০ হাজার বসতভিটা এবং কয়েক হাজার একর আবাদি জমি। যমুনা নদীর তীরবর্তী দুর্গম চর সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটবাড়ি, দলিকা, মানিকদাইড় থেকে পাকুরিয়ার চর হয়ে ধারাবর্ষার চর পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার অংশে কয়েক বছর ধরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে যমুনার তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে টেংরাকুড়া থেকে পাকুরিয়া হয়ে শনপচার চর পর্যন্ত অংশ। ভাঙনে দিশেহারা মানুষ বসতভিটা সরিয়ে নিলেও, ভাঙছে আবাদি জমি। পাকুরিয়ার চরের খেয়াঘাটে কথা হয় মেহের আলীর সঙ্গে। 

তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালের বন্যার পর থেকে ২৩ দফা বসতবাড়ি ভেঙেছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ৫২ বিঘা আবাদি জমি। ২০১৫ সালে শেষ সম্বল বসতভিটাও নদীতে ভেঙে যায়। কূল-কিনারা না পেয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ওঠেন সোনাতলা উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। শুধু মেহের আলী নন, যমুনা নদীর প্রবল ভাঙনে তার মতো অসংখ্য পরিবার এখন বাস্তুহারা। একসময় চরের সচ্ছল কৃষক হয়েও এখন সহায়-সম্বলহীন তারা। 

 

কাজলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শাজাহান আলী বলেন, যমুনার ভয়াবহ ভাঙনে পাকুরিয়ার চর মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। গত চার বছরে এই চরের প্রায় ২ হাজার একর আবাদি জমি, ৫০০ বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় পাকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে।

যমুনার বাম তীর রক্ষায় গত অর্থবছরে পাউবো জামালপুর কার্যালয় থেকে ৫৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে তীর রক্ষায় একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ভাঙন রোধে সারিয়াকান্দি উপজেলার পাকেরদহ থেকে কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের শনপচা পর্যন্ত ৬ দশমিক ২৫ কিলোমিটার যমুনা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প বা বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয় গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। তবে কাজের ধীরগতিতে হতাশ যমুনার তীরবর্তী চরাঞ্চলের মানুষ।

জামালপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ বলেন, যমুনার বাম তীর রক্ষায় গত অর্থবছরে ৫৮৪ কোটি টাকার তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই এ প্রকল্পের ২৫ শতাংশ কাজ শেষ। ২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। প্রকল্পের অধীনে নদীর তীরে প্রায় ১৫ লাখ জিওটেক্স বিছিয়ে এর ওপর প্রায় ৪৬ লাখ সিসি ব্লক বসানো হবে। 

অর্থ ছাড়ের জটিলতায় প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে এগোচ্ছে দাবি করে মোহাম্মদ আবু সাঈদ বলেন, প্রকল্পের ২৫ শতাংশ; অর্থাৎ প্রায় ১৫০ কোটি টাকার কাজ শেষ হয়েছে। অথচ এ পর্যন্ত প্রকল্পের অর্থ ছাড় হয়েছে ৬৭ কোটি টাকা। ঠিকমতো অর্থ ছাড় হলে কার্যাদেশের মেয়াদ শেষের আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব।


বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top