ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০

দূষণমুক্ত, সবুজ ও নিরাপদ বিশ্ব গড়তে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান


প্রকাশিত:
২০ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৩২

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ২০:৩৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারি ও প্রকৃতি ধ্বংস করাকে অভিন্ন হুমকি হিসেবে অভিহিত করে দূষণমুক্ত, সবুজ ও নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তোলার একটি অভিন্ন সমাধানে পৌঁছার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী ও জি-২০ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ঠেকাতে 'অঙ্গীকারগুলোকে কাজে পরিণত' করার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বাসসের।

২০১৫ জাপানের নিক্কি ক্রয়কৃত লন্ডনভিত্তিক বিশ্বের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ পত্রিকা ফিনান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত সাম্প্রতিক নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, 'আমরা যেসব সংকটের সম্মুখীন সেগুলোর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে অত্যন্ত ভিন্ন প্রকৃতির। কিন্তু এটি মোকাবিলা করতে অসীম সহিষ্ণুতা, কল্পনা, আশা ও নেতৃত্বের প্রয়োজন।'

তিনি আরও বলেন, ''বাংলায় আমরা বলে থাকি- 'ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।' আমাদের এমন কিছু করা উচিত নয়, যা থেকে ফিরে আসা আর সম্ভব নয়।'

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টার ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী এই বৈশ্বিক সমস্যাটি মোকাবিলায় তার সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।

নিবন্ধে তিনি আরও বলেন, 'বিজ্ঞান যা দাবি করছে সে বিষয়ে পশ্চিমা নেতারা যদি মনোযোগ দেন, সম্পৃক্ত হন ও সুচিন্তিতভাবে কাজ করেন তাহলে কপ২৬ সফল করার মতো সময় এখনো আছে যা সফল করা অত্যন্ত জরুরি।'


নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ফাঁকা প্রতিশ্রুতি নয়, আমাদের প্রয়োজন একটি বৈশ্বিক জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা।'

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রয়োজনের বিষয়ে গুরুত্ব না দেওয়ায় শেখ হাসিনা উন্নত দেশগুলোর সমালোচনা করেন। নিবন্ধে বলা হয়, 'ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের বর্তমান সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় দ্রুত টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে তহবিল বাড়ানো ও প্রযুক্তি প্রাপ্তির জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জি-২০ এর কাছে আরও সহায়তা কামনা করছে।'

জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এই গ্রুপটির দেশগুলোতে বৈরি আবহাওয়া মোকাবিলায় সবচেয়ে ভালো প্রস্তুতি গ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তিনি বলেন, 'আমরা সমুদ্র দেয়াল তৈরি করছি, ম্যানগ্রোভ বনায়ন করছি, প্রতিটি সরকারি কাজে জলবায়ু সহিষ্ণু পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।'

নিবন্ধে বলা হয়, 'কিন্তু আমরা একা এই পথ অতিক্রম করতে পারব না। ৬৪টি দেশ ও ইইউ এই সপ্তাহে ধরিত্রীর জন্য জরুরিভিত্তিতে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় অঙ্গীকারনামায় সই করেছে। এই দেশগুলোতে প্রায় ১.৪ বিলিয়ন লোকের বাস এবং বৈশ্বিক মোট উৎপাদনের এক-চুতর্থাংশ এখান থেকে আসে। সেখান থেকেই, আমাদের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক পর্যায়ে অভিন্ন রাজনৈতিক সদিচ্ছা গড়ে তুলতে হবে।'

হাসিনা আরও লিখেছেন, 'পরবর্তী কপ, জি৭ ও জি২০ সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে যুক্তরাজ্য ও ইতালিকে অবশ্যই এই এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাবে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য সমন্বিত সহায়তা প্যাকেজ প্রয়োজন।'

প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘যদি প্রকৃতি আরও বিরূপ হয়, তবে তা আমাদের রক্ষা করবে না। সবাইকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে। বাংলাদেশে কিছু হলে লন্ডন ও নিউইয়র্কেও তার প্রভাব পড়বে।'

বাংলাদেশের ইস্যু তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, 'বহু রক্তপাত ও যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে আজ থেকে ৫০ বছর আগে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে উৎসাহ ও নেতৃত্ব দেন। তার স্মরণে আমরা জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার নাম রেখেছি মুজিব প্ল্যান।'

তিনি আরও লিখেছেন, 'আমাদের সময়ের কঠিন সত্য হচ্ছে- জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পদক্ষেণ গ্রহণ, এর আগে এতোটা জরুরি হয়ে দেখা দেয়নি। বিভিন্ন দেশের সরকার তাদের দেশকে আমার দেশের মতো নিরাপদ রাখতে যথেষ্ট দ্রুত নিঃসরণ হ্রাস করছে না।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ বিশুদ্ধ পানির জন্য হিমালয়ের বরফ ক্ষেত্রের ওপর নির্ভর করে থাকে। দক্ষিণে সমুদ্রের পানির স্তর বৃদ্ধি উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর ফলে শস্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে- যাকে আরেকটি ধ্বংসাত্মক পরিবর্তন বলে আমরা মনে করতে পারি।'

বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাংলাদেশের কার্বন নিঃসরণের অবদান খুবই সামান্য উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, 'আমরা একটি সমাধানের পথে নেতৃত্ব দেব বলে অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও, শুধু আমাদের ইচ্ছাতেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ঠেকানো সম্ভব নয়। এতে অর্থনৈতিক বিষয়টিও রয়েছে। শূন্য-কার্বন নিঃসরণ প্রয়াসে বিনিয়োগ বৃদ্ধিই আমাদের জাতির আরও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার সর্বোত্তম উপায়।'

শেখ হাসিনা বলেন, এই বছরের শুরুতে তার সরকার কয়লাভিত্তিক ১০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিকল্পনা বাতিল করেছে তবে এটি তুলনামূলকভাবে একটি ছোট পদক্ষেপ ছিল।

তিনি বলেন, ''পরবর্তীতে কোপ ২৬-এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিশ্বের প্রথম জাতীয় 'জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা' গড়ে তুলেছি এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গিতে যার আওতায় আমরা স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি, আমাদের অর্থনীতির বিকাশ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আমাদের নাগরিকদের জন্য সুযোগ প্রসারিত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর পদক্ষেপকে অনুঘটক হিসেবে ব্যবহার করব। দশকের শেষের দিকে আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৩০ শতাংশ শক্তি সংগ্রহ করব।''

শেখ হাসিনা লেখেন, 'আমরা বিশ্বাস করি উপকূলে উইন্ড ফার্মের উন্নয়ন ম্যানগ্রোভ বনকে পুনরুজ্জীবিত করবে যা আমাদের সরে যাওয়া উপকূলকে স্থিতিশীল করতে সহায়তা করে ঝড় ও বন্যার বিরুদ্ধে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। আমরা ব্যাংকগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানিমুক্ত অবকাঠামো প্রকল্পে অনুকূল শর্তাদি প্রদান এবং গ্রিন হাইড্রোজেনের মতো ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করার ক্ষমতা দেব। স্থিতিস্থাপকতা এবং শূন্য-কার্বন উন্নয়নে বিনিয়োগ করে, আমরা এই দশকে স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৪.১ মিলিয়ন বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করব। এই পরিকল্পনা একই সঙ্গে অর্থনৈতিক ক্ষতির ৬.৮ শতাংশ পর্যন্ত প্রতিরোধ করবে যা কেবল জলবায়ু পরিবর্তন থেকে নয়, বরং ক্রমবর্ধমান অলাভজনক জীবাশ্ম জ্বালানি অবকাঠামো থেকেও আসবে।'

তিনি আরও লেখেন, 'আমরা আমাদের জিডিপিতে সুবিধা ৮৫০ বিলিয়নেরও বেশি হিসাব করি। আমি বিশ্বাস করি ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সদস্যদের নেতৃত্বে আগামী মাস ও বছরগুলোতে আরও উন্নয়নশীল দেশ এই ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। বাংলাদেশ অন্যান্য দেশ ছাড়াই স্বাধীনভাবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে, যদিও আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়নের ফলে পরিস্থিতি দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে।'

তিনি দাবি করেন, প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য পূরণ করতে হলে যদি তারা প্রাক-শিল্প স্তর থেকে উষ্ণায়নকে ১.৫ সেন্টিগ্রেডের কম রাখতে পারে, তা আমাদের জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার একটি বৈশ্বিক সংস্করণ।

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, 'গ্লাসগোতে এই বছরের কোপ ২৬ শীর্ষ সম্মেলন আমাদের সর্বকালের সেরা সুযোগ, এখন অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, তাতে ব্যর্থতার সম্ভাবনা সুদূর পরাহত।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'তিন দশক আগে রিও আর্থ সামিটে বিশ্বকে জলবায়ু ও প্রকৃতি সংকট থেকে বের করে আনার অঙ্গীকার করার পর উন্নত দেশগুলো তাদের সম্মিলিত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন এক-সপ্তমাংশেরও কম কমিয়েছে। এটাকে নেতৃত্ব বলে না।'

নিবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, 'যদিও ইইউ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যদের সাম্প্রতিক নেট জিরো অঙ্গীকার স্বাগত, তারা মূলত নীতিমালার সঙ্গে থাকে না, যাতে এই আত্মবিশ্বাস জন্মায় যে তারা তা করতে পারবে না। প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থ প্রদানের ১২ বছর আগের প্রতিশ্রুতি অপূরণই থেকে গেছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর মতে, শূন্য কার্বন ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর যা প্রয়োজন হবে তার তুলনায় এই ১০০ বিলিয়ন ডলার অপ্রতুল। সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উভয়ই বিনিয়োগ করতে চায় কিন্তু এখন কোভিড সম্পর্কিত ঋণের কারণে আমরা মূলধনের উচ্চ ব্যয়ের কঠোর বোঝার সম্মুখীন।'

নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, 'উন্নত দেশগুলো যদি সাহায্য করতে চায় তবে তাদের অবশ্যই এর সমাধান করতে হবে। মূলধনের ব্যয় হ্রাস করা হলে, তা পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ বিশ্বজুড়ে কার্বন মুক্তকরণকে যথেষ্ট ত্বরান্বিত করবে, বিশ্বব্যাপী এর সুবিধা পাওয়া যাবে।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'কোভিড-১৯-এর প্রতিক্রিয়ার ভিভিড ইকোনমিক্সের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায় যে জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর এর মিশ্র প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। সবুজ পুনরুদ্ধারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য আমি ইইউকে অভিবাদন জানাই।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা বাংলাদেশেও একই কাজ করার পরিকল্পনা করছি এবং আমি আন্তরিকভাবে আশা করি আমার সহকর্মী নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি ব্যবসায়ী নেতারাও তা করবেন। কাজগুলো অবশ্যই অগ্রাধিকার পেতে হবে, কিন্তু ভবিষ্যতের কাজ এবং পরবর্তী কয়েক দশক ধরে শক্ত ভিত্তি তৈরি করার কাজও করতে হবে।'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারি ও প্রকৃতি ধ্বংস করাকে অভিন্ন হুমকি হিসেবে অভিহিত করে দূষণমুক্ত, সবুজ ও নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তোলার একটি অভিন্ন সমাধানে পৌঁছার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী ও জি-২০ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ঠেকাতে 'অঙ্গীকারগুলোকে কাজে পরিণত' করার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বাসসের।

২০১৫ জাপানের নিক্কি ক্রয়কৃত লন্ডনভিত্তিক বিশ্বের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ পত্রিকা ফিনান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত সাম্প্রতিক নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, 'আমরা যেসব সংকটের সম্মুখীন সেগুলোর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে অত্যন্ত ভিন্ন প্রকৃতির। কিন্তু এটি মোকাবিলা করতে অসীম সহিষ্ণুতা, কল্পনা, আশা ও নেতৃত্বের প্রয়োজন।'

তিনি আরও বলেন, ''বাংলায় আমরা বলে থাকি- 'ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।' আমাদের এমন কিছু করা উচিত নয়, যা থেকে ফিরে আসা আর সম্ভব নয়।'

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টার ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী এই বৈশ্বিক সমস্যাটি মোকাবিলায় তার সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।

নিবন্ধে তিনি আরও বলেন, 'বিজ্ঞান যা দাবি করছে সে বিষয়ে পশ্চিমা নেতারা যদি মনোযোগ দেন, সম্পৃক্ত হন ও সুচিন্তিতভাবে কাজ করেন তাহলে কপ২৬ সফল করার মতো সময় এখনো আছে যা সফল করা অত্যন্ত জরুরি।'


নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ফাঁকা প্রতিশ্রুতি নয়, আমাদের প্রয়োজন একটি বৈশ্বিক জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা।'

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রয়োজনের বিষয়ে গুরুত্ব না দেওয়ায় শেখ হাসিনা উন্নত দেশগুলোর সমালোচনা করেন। নিবন্ধে বলা হয়, 'ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের বর্তমান সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় দ্রুত টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে তহবিল বাড়ানো ও প্রযুক্তি প্রাপ্তির জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জি-২০ এর কাছে আরও সহায়তা কামনা করছে।'

জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এই গ্রুপটির দেশগুলোতে বৈরি আবহাওয়া মোকাবিলায় সবচেয়ে ভালো প্রস্তুতি গ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তিনি বলেন, 'আমরা সমুদ্র দেয়াল তৈরি করছি, ম্যানগ্রোভ বনায়ন করছি, প্রতিটি সরকারি কাজে জলবায়ু সহিষ্ণু পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।'

নিবন্ধে বলা হয়, 'কিন্তু আমরা একা এই পথ অতিক্রম করতে পারব না। ৬৪টি দেশ ও ইইউ এই সপ্তাহে ধরিত্রীর জন্য জরুরিভিত্তিতে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় অঙ্গীকারনামায় সই করেছে। এই দেশগুলোতে প্রায় ১.৪ বিলিয়ন লোকের বাস এবং বৈশ্বিক মোট উৎপাদনের এক-চুতর্থাংশ এখান থেকে আসে। সেখান থেকেই, আমাদের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক পর্যায়ে অভিন্ন রাজনৈতিক সদিচ্ছা গড়ে তুলতে হবে।'

হাসিনা আরও লিখেছেন, 'পরবর্তী কপ, জি৭ ও জি২০ সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে যুক্তরাজ্য ও ইতালিকে অবশ্যই এই এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাবে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য সমন্বিত সহায়তা প্যাকেজ প্রয়োজন।'

প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘যদি প্রকৃতি আরও বিরূপ হয়, তবে তা আমাদের রক্ষা করবে না। সবাইকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে। বাংলাদেশে কিছু হলে লন্ডন ও নিউইয়র্কেও তার প্রভাব পড়বে।'

বাংলাদেশের ইস্যু তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, 'বহু রক্তপাত ও যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে আজ থেকে ৫০ বছর আগে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে উৎসাহ ও নেতৃত্ব দেন। তার স্মরণে আমরা জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার নাম রেখেছি মুজিব প্ল্যান।'

তিনি আরও লিখেছেন, 'আমাদের সময়ের কঠিন সত্য হচ্ছে- জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পদক্ষেণ গ্রহণ, এর আগে এতোটা জরুরি হয়ে দেখা দেয়নি। বিভিন্ন দেশের সরকার তাদের দেশকে আমার দেশের মতো নিরাপদ রাখতে যথেষ্ট দ্রুত নিঃসরণ হ্রাস করছে না।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ বিশুদ্ধ পানির জন্য হিমালয়ের বরফ ক্ষেত্রের ওপর নির্ভর করে থাকে। দক্ষিণে সমুদ্রের পানির স্তর বৃদ্ধি উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর ফলে শস্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে- যাকে আরেকটি ধ্বংসাত্মক পরিবর্তন বলে আমরা মনে করতে পারি।'

বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাংলাদেশের কার্বন নিঃসরণের অবদান খুবই সামান্য উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, 'আমরা একটি সমাধানের পথে নেতৃত্ব দেব বলে অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও, শুধু আমাদের ইচ্ছাতেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ঠেকানো সম্ভব নয়। এতে অর্থনৈতিক বিষয়টিও রয়েছে। শূন্য-কার্বন নিঃসরণ প্রয়াসে বিনিয়োগ বৃদ্ধিই আমাদের জাতির আরও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার সর্বোত্তম উপায়।'

শেখ হাসিনা বলেন, এই বছরের শুরুতে তার সরকার কয়লাভিত্তিক ১০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিকল্পনা বাতিল করেছে তবে এটি তুলনামূলকভাবে একটি ছোট পদক্ষেপ ছিল।

তিনি বলেন, ''পরবর্তীতে কোপ ২৬-এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিশ্বের প্রথম জাতীয় 'জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা' গড়ে তুলেছি এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গিতে যার আওতায় আমরা স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি, আমাদের অর্থনীতির বিকাশ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আমাদের নাগরিকদের জন্য সুযোগ প্রসারিত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর পদক্ষেপকে অনুঘটক হিসেবে ব্যবহার করব। দশকের শেষের দিকে আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৩০ শতাংশ শক্তি সংগ্রহ করব।''

শেখ হাসিনা লেখেন, 'আমরা বিশ্বাস করি উপকূলে উইন্ড ফার্মের উন্নয়ন ম্যানগ্রোভ বনকে পুনরুজ্জীবিত করবে যা আমাদের সরে যাওয়া উপকূলকে স্থিতিশীল করতে সহায়তা করে ঝড় ও বন্যার বিরুদ্ধে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। আমরা ব্যাংকগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানিমুক্ত অবকাঠামো প্রকল্পে অনুকূল শর্তাদি প্রদান এবং গ্রিন হাইড্রোজেনের মতো ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করার ক্ষমতা দেব। স্থিতিস্থাপকতা এবং শূন্য-কার্বন উন্নয়নে বিনিয়োগ করে, আমরা এই দশকে স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৪.১ মিলিয়ন বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করব। এই পরিকল্পনা একই সঙ্গে অর্থনৈতিক ক্ষতির ৬.৮ শতাংশ পর্যন্ত প্রতিরোধ করবে যা কেবল জলবায়ু পরিবর্তন থেকে নয়, বরং ক্রমবর্ধমান অলাভজনক জীবাশ্ম জ্বালানি অবকাঠামো থেকেও আসবে।'

তিনি আরও লেখেন, 'আমরা আমাদের জিডিপিতে সুবিধা ৮৫০ বিলিয়নেরও বেশি হিসাব করি। আমি বিশ্বাস করি ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সদস্যদের নেতৃত্বে আগামী মাস ও বছরগুলোতে আরও উন্নয়নশীল দেশ এই ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। বাংলাদেশ অন্যান্য দেশ ছাড়াই স্বাধীনভাবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে, যদিও আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়নের ফলে পরিস্থিতি দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে।'

তিনি দাবি করেন, প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য পূরণ করতে হলে যদি তারা প্রাক-শিল্প স্তর থেকে উষ্ণায়নকে ১.৫ সেন্টিগ্রেডের কম রাখতে পারে, তা আমাদের জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার একটি বৈশ্বিক সংস্করণ।

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, 'গ্লাসগোতে এই বছরের কোপ ২৬ শীর্ষ সম্মেলন আমাদের সর্বকালের সেরা সুযোগ, এখন অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, তাতে ব্যর্থতার সম্ভাবনা সুদূর পরাহত।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'তিন দশক আগে রিও আর্থ সামিটে বিশ্বকে জলবায়ু ও প্রকৃতি সংকট থেকে বের করে আনার অঙ্গীকার করার পর উন্নত দেশগুলো তাদের সম্মিলিত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন এক-সপ্তমাংশেরও কম কমিয়েছে। এটাকে নেতৃত্ব বলে না।'

নিবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, 'যদিও ইইউ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যদের সাম্প্রতিক নেট জিরো অঙ্গীকার স্বাগত, তারা মূলত নীতিমালার সঙ্গে থাকে না, যাতে এই আত্মবিশ্বাস জন্মায় যে তারা তা করতে পারবে না। প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থ প্রদানের ১২ বছর আগের প্রতিশ্রুতি অপূরণই থেকে গেছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর মতে, শূন্য কার্বন ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর যা প্রয়োজন হবে তার তুলনায় এই ১০০ বিলিয়ন ডলার অপ্রতুল। সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উভয়ই বিনিয়োগ করতে চায় কিন্তু এখন কোভিড সম্পর্কিত ঋণের কারণে আমরা মূলধনের উচ্চ ব্যয়ের কঠোর বোঝার সম্মুখীন।'

নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, 'উন্নত দেশগুলো যদি সাহায্য করতে চায় তবে তাদের অবশ্যই এর সমাধান করতে হবে। মূলধনের ব্যয় হ্রাস করা হলে, তা পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ বিশ্বজুড়ে কার্বন মুক্তকরণকে যথেষ্ট ত্বরান্বিত করবে, বিশ্বব্যাপী এর সুবিধা পাওয়া যাবে।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'কোভিড-১৯-এর প্রতিক্রিয়ার ভিভিড ইকোনমিক্সের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায় যে জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর এর মিশ্র প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। সবুজ পুনরুদ্ধারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য আমি ইইউকে অভিবাদন জানাই।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা বাংলাদেশেও একই কাজ করার পরিকল্পনা করছি এবং আমি আন্তরিকভাবে আশা করি আমার সহকর্মী নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি ব্যবসায়ী নেতারাও তা করবেন। কাজগুলো অবশ্যই অগ্রাধিকার পেতে হবে, কিন্তু ভবিষ্যতের কাজ এবং পরবর্তী কয়েক দশক ধরে শক্ত ভিত্তি তৈরি করার কাজও করতে হবে।'


বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top