ঢাকা সোমবার, ৬ই মে ২০২৪, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘ হচ্ছে গ্রীষ্মকাল, বাড়ছে অতিবৃষ্টির সম্ভাবনা: গবেষণা


প্রকাশিত:
১ মার্চ ২০২৪ ১৮:৫৩

আপডেট:
৬ মে ২০২৪ ০৩:০৩

দেশে গরমের সময়, অর্থাৎ গ্রীষ্মকালের দৈর্ঘ্য বেড়েছে। একই সঙ্গে আগের তুলনায় তাপমাত্রা কমছে শীতের দিনে এবং বদলে যাচ্ছে বর্ষা মৌসুমের সময়ও। এতে দেশের কৃষিতে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। শীতের সময় দিনের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় ধানের ফলনেও প্রভাব পড়ছে। আর বর্ষার সময় পরিবর্তন হওয়ায় সামগ্রিক কৃষি খাতেই প্রভাব পড়ছে, ডেঙ্গুর মতো বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বাড়ছে।

‘বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল জলবায়ু: আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণে ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের প্রবণতা এবং পরিবর্তন’ শীর্ষক গবেষণায় দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের এই চিত্র উঠে এসেছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার রাজধানীর বিজয় সরণির বঙ্গবন্ধু মিলিটারি জাদুঘরে মাল্টিপারপাস মিলনায়তনে আবহাওয়া অধিদপ্তরের উদ্যোগে এই গবেষণার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার-ভেন্ডসেন, নরওয়ের আবহাওয়া ইনস্টিটিউটের প্রধান হান্স ওলাভ হাইজিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিভাগের প্রধান ড. ফাতিমা আখতারসহ অনেকে। এতে সভাপতিত্ব করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁকে সহযোগিতা করেছেন আফরোজা সুলতানা ও এস এম কামরুল হাসান। অন্যদিকে নরওয়ের গবেষক এলিয়া কুয়া, কাজসা পারডিং ও হান্স ওলাভও এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন বছর এই গবেষণা হয়েছে। সারা দেশের আবহাওয়ার ৩৫টি স্টেশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই গবেষণা করা হয়েছে।

দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি উল্লেখ করে বজলুর রশীদ বলেন, ‘গরমে দেশের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। গরমের সময় বাড়ছে। অন্যদিকে শীতের সময় কমেছে। শীতে দিনের তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে। এতে করে মেঘ ও কুয়াশার পরিমাণও বাড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘২০১০ সালের পর ঢাকা বিভাগে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। এর একটা বড় কারণ দূষণ।’ ভবিষ্যতে এই তাপমাত্রা বাড়বে বলেও আশঙ্কা ব্যক্ত করেন তিনি।

বজলুর রশীদ বলেন, ‘বর্ষার সময় তাপমাত্রা বাড়ছে সারা দেশে। এখন অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। অর্থাৎ, বর্ষার সময় পরিবর্তন হয়েছে, বৃষ্টি দেরি করে আসছে এবং দেরি করে যাচ্ছে। প্রি মনসুন, মনসুন ও পোস্ট মনসুনের যে বিষয়—সেখানে দেখা যাচ্ছে পোস্ট মনসুনে (অর্থাৎ, বাংলাদেশে পরিচিত বর্ষাকালের বদলে বর্ষ মৌসুম-পরবর্তী সময়ে) বৃষ্টির পরিমাণ বাড়ছে।’

গবেষণায় দেখা গেছে, রংপুর, খুলনাসহ প্রায় সব বিভাগেই বর্ষা মৌসুমে তাপপ্রবাহ বেড়েছে। তবে চট্টগ্রামে তাপপ্রবাহের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম। আবার জুন, জুলাই মাসেও তাপপ্রবাহ বেড়েছে, যে কারণে বর্ষা আসছে দেরিতে।

এ বিষয়ে বজলুর রশীদ বলেন, ‘বায়ুদূষণের কারণে দেশের তাপমাত্রায় বড় প্রভাব পড়ছে। আর এ ক্ষেত্রে ট্রান্সবাউন্ডারি বায়ুদূষণের প্রভাব রয়েছে। শীতের সময় গড় তাপমাত্রা বাড়লেও দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য অনেকটাই কমে গেছে। এর কারণ বায়ুদূষণ।’

গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বজলুর রশীদ জানান, ঢাকার তাপমাত্রা গত ৪০ বছর ধরেই বাড়ছে। আবার ঢাকাসহ দেশের আট বিভাগেই বর্ষা মৌসুমে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার সীমা বেড়ে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে রাজশাহীতে।

গবেষণায় দেখা গেছে, সূর্যের আলোর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি কমেছে শীতকালে। এর মধ্যে গত ৪০ বছরে রংপুর বিভাগে সূর্যালোক সবচেয়ে বেশি কমেছে। এরপর সূর্যালোক কমেছে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগে। অন্যদিকে মেঘের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত বেশি হারে বেড়েছে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগে

গবেষক হান্স ওলাভ বলেন, ‘বাংলাদেশের আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য আঞ্চলিক ও স্থানীয় দূষণ দায়ী।’ ওলাভ তাঁর উপস্থাপনায় বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমের সময় আরও কমে আসবে। গরমের সময় বাড়বে। আবার দেখা যাবে, অনেক গরমের পর অল্প সময় অতিবৃষ্টি হবে।’

রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার-ভেন্ডসেন বলেন, ‘বিশ্ব একটাই, আর তাই আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব সবার ওপর পড়বেই। ভবিষ্যতে জলবায়ুর আরও পরিবর্তন হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মধ্যে আছে। এ জন্য সঠিক গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ দরকার। নরওয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে থাকবে এসব কাজে।’

আজিজুর রহমান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। তাঁরা মূলত কয়েকটি বিষয়কে মাথায় রেখে গবেষণা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে বর্ষা মৌসুম, তাপপ্রবাহ, শীতের ধরন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।’


বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top