জলবায়ু পরিবর্তনের ভুক্তভোগী বাংলাদেশ, ক্ষতিপূরণ দিতে হবে দায়ী রাষ্ট্রগুলোকে
![](https://poribeshtv.com/uploads/shares/2023/ptv1-2023-11-18-16-54-12.jpg)
দিন দিন জলবায়ু পরিবর্তনে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কিছু প্রভাব দৃশ্যমান আর কিছু মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবন-জীবিকায় পরোক্ষভাবে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তনে বেশি দায়ী ধনী রাষ্ট্রগুলো, অথচ বাংলাদেশ নির্দোষ ভুক্তভোগী। এমতাবস্থায় জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণে সম্মিলিতভাবে ধনী দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করতে হবে।
১৭ নভেম্বর, শুক্রবার স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে দুই দিনব্যাপী জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিতে সমাবেশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচকেরা এসব কথা বলেন। এতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, সুশীল সমাজ, উপকূল ও হাওড়সহ বিভিন্ন জলাবায়ু সংবেদনশীল এলাকার ৯০০ প্রতিনিধি অংশ নেন।
সকাল ৯টায় বর্ণাঢ্য র্যালির মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী ও সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল। তিনি বক্তব্যে বলেন, ‘বর্তমানে যে জলবায়ু সংকট, তা মানবসৃষ্ট। নানাভাবে আমরা পরিবেশকে নষ্ট করছি। সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলো বিভিন্ন লাভজনক প্রকল্পের আওতায় এনে প্রতিনিয়ত তা ধ্বংস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছি। এই সমাবেশ থেকে নিজেদের করণীয় খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।’
প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে কম দায়ীরাই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে। আবার যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ, জলবায়ু অভিযোজনে তাঁরাই সবচেয়ে কম ক্ষমতাসম্পন্ন। তাই এই সংকট মোকাবিলায় জলবায়ু ন্যায্যতার দাবি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণে ধনী দেশগুলোকে বাধ্য করতে সম্মিলিত দাবি রাখতে হবে।’
স্বাগত বক্তব্যে বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ নির্দোষ ভুক্তভোগী। উপকূল থেকে পাহাড়ি অঞ্চল, বরেন্দ্রভূমি থেকে হাওর অঞ্চল, সর্বত্র এর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এটা কাটিয়ে উঠতে আমাদের ক্ষতিপূরণ দরকার। যেটা দায়ী রাষ্ট্রগুলো থেকে আমরা দাবি করছি। জলবায়ু ন্যাযতা সমাবেশ আমাদের অধিকার আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, ‘ভ্রান্ত উন্নয়ন নীতির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতার প্রতি চরম অবহেলার সংস্কৃতি তৈরি করছি। এই সম্মেলনের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি স্বার্থন্বেষী মহলকে একটি বার্তা পৌঁছে দিতে চাচ্ছি। যা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের ক্ষোভ ও দুর্দশার কথা তুলে ধরবে।’
আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র পাঁচ শতাংশ জনগোষ্ঠী হচ্ছে আদিবাসী। তাঁরাই পৃথিবীর মোট জীববৈচিত্রের ৮০ শতাংশ রক্ষা করে। উন্নত বিশ্বের অপরিণামদর্শী উন্নয়ন দর্শন আমাদের মতো দেশগুলোর বাস্তুসংস্থানকে চরমভাবে ব্যাহত করেছে। বিশেষ করে আমাদের আদিবাসি জনগোষ্ঠি খুব বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ফাতিনাজ ফিরোজ। মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন এশিয়ান পিপলস্ মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এপিএমডিডি) সমন্বয়ক লিডি ন্যাকপিল ও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশীদ।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জাপান প্রতিনিধি মাকিকু আরিমা, নেপাল প্রতিনিধি অর্জুন কারকি, তারা ক্লাইমেট ফাউন্ডেশনের ডেপুটি রিজিওনাল প্রোগ্রাম ডিরেক্টর কাইনান হাউটন, ইউএনডিপি’র সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক, সিইআর প্রতিনিধি চৌধুরি মোহাম্মদ শাহরিয়ার আহমেদ, আইইইএফএ’র প্রতিনিধি শফিকুল আলম, কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী, সিপিআরপি’র প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিশিষ্ট জলবায়ু বিশেষজ্ঞ সলিমুল হকের জন্য এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এ সময় তাঁর স্মৃতিচারণ করেন সলিমুল হকের পুত্র সাকিবুর রহমান সাকিব হক। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৮) উপলক্ষে আয়োজিত দুই দিনের এই সমাবেশ আগামীকাল শনিবার (১৮ নভেম্বর) বেলা ৩টায় ঘোষণাপত্র গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: