ঢাকা শুক্রবার, ২৪শে জানুয়ারী ২০২৫, ১১ই মাঘ ১৪৩১

টক খাবারে মানুষের চোখ–মুখ কুচকে যায় কেন?


প্রকাশিত:
১ আগস্ট ২০২৪ ১৭:২৩

আপডেট:
২৪ জানুয়ারী ২০২৫ ০৩:০৭

টক জাতীয় খাবার খাওয়ার সময় স্বাভাবিক মুখভঙ্গি ধরে রাখা কঠিন! বিশেষ করে শিশুরা যখন প্রথমবার টক স্বাদের সঙ্গে পরিচিত হয়, তখন তারা অদ্ভুত মুখভঙ্গি করে।

টক খাওয়ার সঙ্গে অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করার কী সম্পর্ক, তা স্পষ্টভাবে জানেন না বিজ্ঞানীরা। তবে এমন প্রতিক্রিয়া দেখানোর পেছনে তিনটি বিষয় সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা। সেগুলো হলো—প্রোটন, ভিটামিন সি ও পূর্বপুরুষদের ফলের ওপর নির্ভরতা।

অ্যাসিডিটির সঙ্গে ‘টক’ স্বাদের সরাসরি সম্পর্ক। টক খাবার মুখে দেওয়ার পর জিহ্বার স্বাদ গ্রন্থি মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায় যে, আপনার মুখে অনেকগুলো মুক্ত প্রোটন রয়েছে। প্রোটন কিন্তু নিজেই টক নয়। তবে মানবদেহ প্রোটনকে টক হিসেবে বিবেচনা করে বলে বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়।

বেঁচে থাকার জন্য মানুষের দেহে অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। একে ভিটামিন সি–ও বলা হয়।

মানবদেহের কোষ ও টিস্যুর স্বাভাবিকভাবে কাজ করার জন্য এই ভিটামিন সি অপরিহার্য। দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি–এর সরবরাহ না থাকলে স্কার্ভির মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে।

টক স্বাদ মজাদার ও মানবদেহের জন্য উপকারী হলেও এই ধরনের খাবার খাওয়ার সময় মানুষ কেন মুখ ও চোখ কুচকে অস্বস্তিভাব দেখায়? এর উত্তর দিয়েছেন অধ্যাপক পল ব্রেসলিন। ব্রেসলিন বলেন, ‘টক খাবার খাওয়ার সময় চোখ মুখ কুঁচকে যাওয়া একধরনের প্রত্যাখ্যানের প্রকাশ যা অন্যদের সংকেত দেওয়ার কৌশল। অর্থাৎ খাবারটি টক তা অন্যদের জানাতে অবচেতন ভাবে মুখের এই ভঙ্গি করে মানুষ।’

যখন সাইট্রিক অ্যাসিড বা ভিনেগারের মতো টক পদার্থ জিহ্বায় স্বাদ গ্রহণকারী কোষগুলোকে উদ্দীপিত করে, তখন মানুষের মুখ একটি বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখায়। এসব প্রতিক্রিয়ার মধ্যে মুখের পেশি শক্ত হওয়ার মতো বিষয়ও থাকতে পারে। হুট করে উজ্জ্বল আলো চোখে পড়লে চোখ যেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় বা কোনো কিছু চমকে দিলে মানবদেহ যেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় বিষয়টি তেমনই।

খাবারের হাইড্রোজেন আয়ন জিহ্বার লালার সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করলে টক স্বাদ পাওয়া যায়। যখন এই অম্লীয় নির্দেশককে জিহ্বা শনাক্ত করে তখন মস্তিষ্ক সঙ্গে সঙ্গে সংকেত পাঠায়। জিহ্বার স্বাদ রিসেপ্টরগুলো উদ্দীপিত হয় ও প্রতিক্রিয়া হিসেবে মানুষ মুখ কুঁচকে ফেলে। এটি মূলত প্রত্যাখ্যানের প্রতিক্রিয়া বা রিজেকশন রেসপন্স হিসেবে পরিচিত। তিতা ও ঝালযুক্ত খাবারের ক্ষেত্রেও মানুষের মুখ ‘রিজেকশন রেসপন্স’দেখায়।

কোনো খাবারের সামান্য টক স্বাদও উপেক্ষা করা কঠিন। স্বাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো মুখের অভিব্যক্তি পাল্টে যায়। কেউ বিষাক্ত আপেল খাওয়ার পর এই প্রতিক্রিয়া আশপাশের মানুষদের রক্ষা করতে পারে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা দল বেঁধে খাবার খুঁজতে বের হতেন। তাঁদের মুখে নেওয়া খাবারটি নিরাপদ নয়, তা এই প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে অন্যরা বুঝে ফেলতেন।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top