ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ৯ই মে ২০২৪, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১

হাকালুকির পরিবেশ পুনরুদ্ধার : তিন সচিবসহ ২২ জনকে নোটিশ


প্রকাশিত:
২৩ জুলাই ২০২৩ ২১:৫২

আপডেট:
৯ মে ২০২৪ ০৪:৫৮


দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি মালাম বিলের জলজ বৃক্ষ নিধনের ঘটনায় হাওরের হারানো পরিবেশ পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) চার সুপারিশ উপেক্ষিত হয়েছে। এই বিষয়ে কার্যকর প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তিন সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ২২ জনকে ‘নোটিশ অব ডিমান্ড ফর জাস্টিস’ পাঠিয়েছে ‘বেলা’।

বেলার পাঠানো এক নোটিশে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আইনজীবী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এস. হাসানুল বান্না। এ বিষয়ে নোটিশ পাঠানোর সাত দিনের মধ্যে গৃহীত পদক্ষেপ নোটিশদাতাকে অবহিত করতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

হাকালুকি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, জুড়ি ও কুলাউড়া উপজেলা এবং সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোপালগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত।

বেলার নোটিশে বলা হয়েছে, এটি দেশের অন্যতম প্রধান মিঠা পানির বন (সোয়াম্প ফরেস্ট)। বিগত ১৯ এপ্রিল, ১৯৯৯ তারিখে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এ হাওরের ১৮,৩৮৩ (আঠারো হাজার তিন শ তিরাশি) হেক্টর এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে। ঘোষিত এ হাওরে ছোট-বড় অনেক বিল রয়েছ, যার মধ্যে মালাম বিল অন্যতম।

মালাম বিলটি বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের দ্বিতীয়ারদেহী-৮৩ মৌজার এসএ ৫৪ ও ১০৮ দাগে অবস্থিত, যার আয়তন ৪২৮.৯২ একর। বিলটি বদ্ধ জলমহাল হিসেবে পাঁচ বছর মেয়াদে (১৪২৭-১৪৩২ বঙ্গাব্দ) মনাদি মৎস্য সমবায় সমিতিকে মৎস্য চাষের উদ্দেশ্যে ইজারা দেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শন ও বড়লেখা ভূমি অফিসের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ইজারা চুক্তি লঙ্ঘন করে ১৪২৭-১৪২৮ বঙ্গাব্দে (২০২১ সাল) এ বিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক সৃজিত বিভিন্ন প্রজাতির জলজ বৃক্ষ (হিজল, করচসহ অন্যান্য জলজ প্রজাতি) কেটে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ ও ১০-১২ বিঘা জমি চাষ উপযোগী করেছে মনাদি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর বড়লেখা থানায় সাতজনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করলেও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার বৈশিষ্ট্য নষ্ট করে জলজ প্রজাতির বৃক্ষ নিধন ও বাঁধ নির্মাণের স্পষ্ট অভিযোগ থাকলেও মামলায় ইজারা গ্রহীতাকে বিবাদী করা হয়নি এবং ইজারা চুক্তি বাতিল হয়নি।

হাকালুকি হাওরের মালাম বিলের জলজবৃক্ষ নিধনের ঘটনায় হাওরের হারানো পরিবেশ পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) চার সুপারিশ উপেক্ষিত হয়েছে।

চলতি মাসের ২০ জুলাই, বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে কার্যকর প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রণালয়াধীন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রধান বন সংরক্ষক, মৌলভীবাজার ও সিলেটের জেলা প্রশাসক, ইজারাদার সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট ২২ জনকে ‘নোটিশ অব ডিমান্ড ফর জাস্টিস’ পাঠিয়েছে ‘বেলা’। এই বিষয়ে চিঠি প্রেরণের সাত দিনের মধ্যে গৃহীত পদক্ষেপ নোটিশদাতাকে অবহিত করতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, হাকালুকি হাওরের অন্তর্ভুক্ত বড়লেখা উপজেলাধীন মালাম বিলের (মৎস্য জলাশয়) আয়তন ৪২৮.৯২ একর। ১৪২৭ বাংলা থেকে ১৪৩২ বাংলা সন পর্যন্ত সময়ের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ২১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৪৩ টাকায় মালাম বিলটি ইজারা নেয় বড়লেখার মনাদি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি।

মালাম বিলের কান্দির (পাড়ে) সরকারি ভূমিতে পরিবেশ অধিদপ্তর ২০০৩ সাল থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থায়নে হিজল, করচ, বরুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ বৃক্ষ রোপণ করে।

এ ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো জলজ বৃক্ষের রক্ষণাবেক্ষণ করে। প্রাকৃতিক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সৃজিত জলজ উদ্ভিদগুলো ১০-১৫ ফুট উচ্চতার হয়েছে। যা হাকালুকি হাওরের ইসিএ এলাকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রোধে বিশেষ অবদান রেখেছিল। ২০২১ সালের মে মাসের শুরুর দিকে প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় ইজারাদারের লোকজন বিলের বাঁধ নির্মাণের নামে পরিবেশ অধিদপ্তরের ও প্রাকৃতিক জলজ বনের প্রায় ২০ হাজার গাছ অবৈধভাবে কেটে ফেলেন। এতে হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে।

গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর ‘বেলার’ সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল সরেজমিনে মালাম বিল এলাকা পরিদর্শন করে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে চারটি সুপারিশ প্রদান করে। সুপারিশগুলো হচ্ছে- মালাম বিলের চারপাশে যে কৃত্রিম বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে তা অপসারণ করতে হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে কোনো বাঁধ দেওয়া না হয় তা নিশ্চিত করা। যে জায়গার গাছ কাটা হয়েছে সেখানে বৃক্ষ রোপণ করা। কেউ যাতে সরকারি জায়গা দখল করে কৃষিজমির আওতায় নিয়ে আসতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং যারা নির্বিচারে গাছ কেটে হাওরের পরিবেশ বিনষ্ট করেছেন তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সর্বশেষ বেলার প্রতিনিধিদল চলিত মাসের গত ১১ জুলাই ফলোআপ পরিদর্শনে গিয়ে সুপারিশগুলো কার্যকর হয়নি দেখে ২০ জুলাই সংশ্লিষ্টদের নোটিশ প্রদান করেছে।

 


বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top