ছয় বছরে মাত্র ৩৮ দিন ভালো বায়ু গ্রহণ করেছে ঢাকার মানুষ
গত ছয় বছরে মাত্র ৩৮ দিন ভালো বায়ু গ্রহণ করেছে রাজধানীর মানুষ। আর বাকি দিন ঢাকার বাতাসের মান অস্বাস্থ্যকর থেকে দুর্যোগপূর্ণ ছিল। ২০২২ সালের জানুয়ারী মাসের ২৫ দিনের মধ্যে সব দিনই অস্বাস্থ্যকর বায়ু গ্রহণ করেছে রাজধানীবাসী।
ঢাকার বাতাসকে বিষাক্ত করে তোলার জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থ্যাৎ ৩০ শতাংশ দায় হচ্ছে পরিকল্পনা ও সমন্বয়হীন ভাবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও চলমান নির্মাণ কাজ। ২৯ শতাংশ বায়ু দূষণের উৎস ইটভাটা ও শিল্পকলকারখানা। অন্যান্য উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে গাড়ির কালো ধোঁয়া ১৫%, আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণ ১০%, রান্নার চুলা ও গৃহস্থলী ব্যবহার্য থেকে নির্গত বায়ুদূষণ ৯%) এবং বর্জ্য পোড়ানোর কারণে ৭% বায়ুদূষণ হয়।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) -এর ২০২১ সালের এপ্রিল মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ২৭ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলানায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গবেষণাধর্মী এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার বায়ু দূষণের উৎস ভিন্ন হয়ে গেছে। ২০১২ সালের পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী রাজধানীর বায়ুদূষণের প্রধান উৎস ছিল ইটভাটা, যা ছিলো ৫৮ শতাংশ।
ঠিক এক যুগ পর অর্থ্যাৎ ২০২০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে বায়ুদূষণের মূল উৎস হিসেব দেখানো হয় যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়াকে, যা ৫০ শতাংশ।
কিন্তু এক বছর পরই, বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ক্যাপসের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ঢাকার বাতাসে দূষিত বস্তুর উৎস হিসেবে ইটভাটা, যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়ার বদলে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি আর নির্মাণ কাজই বায়ু দূষণের মূল উৎস হিসিবে প্রতীয়মান হচ্ছে।
রাজধানীতে বিপজ্জনক মাত্রায় বায়ু দূষণে জনস্বাস্থ্য ও দুর্যোগ মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে ক্যাপসের পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, নগর পরিকল্পনায় ঘাটতি, আইনের দুর্বলতা ও আইন প্রয়োগে সীমাবদ্ধতায় রাজাধানীতে বায়ুদূষণ বেড়েই চলছে।
ড. আহমদ কামরুজ্জামান আরো বলেন, বিশ্বের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের পরিসংখ্যানে, ২০২০ সালের চেয়ে ২০২১ সালে রাজধানী ঢাকার বায়ুর মান ১২ শতাংশ খারাপ হয়েছে।
ক্যাপসের তথ্যানুসারে, রাজধানী ঢাকায়, বিকাল ৪টার পর বাতাসের মান খারাপ হতে শুরু করে এবং যা রাত ১১টা থেকে রাত ২টার মধ্যে সর্বোচ্চ খারাপ অবস্থানে পৌঁছে। রাত ১০টার পর প্রচুর মালবাহী ট্রাক ঢাকায় চলাচল করে করে। এগুলো থেকে ধুলার পরিমাণ বাড়ে। এছাড়া রাতে ঢাকার রাস্তায় সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা নিয়মিত ঝাড়ু দেয়, ফলে সেখান থেকেও ধূলাবালি উড়ে।
বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল সরকারকে রাজধানীর বায়ুদূষণ সম্পর্কে যথাযথ তথ্য সাধারণ মানুষকে অবহিত করার জোর দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অতিথিরা, শুস্ক মৌসুমে ঢাকায় দৈনিক ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পরপর পানি ছিটানো, নির্মাণ কাজের স্থান উপযুক্ত সামগ্রী দিয়ে ঢেকে রাখা, অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটা বন্ধ করে পরিবেশবান্ধব কংক্রিটের প্রচলন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ করাসহ মোট ১৫টি সুপারিশ তুলে ধরেন।
বিষয়: বায়ু দূষণ রাজধানীতে বায়ু দূষণ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: