ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০

ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পগুলোই হয়ে গেছে আবর্জনা


প্রকাশিত:
৩ অক্টোবর ২০১৯ ১১:৪৪

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ২১:৫৫

ছবি: সংগ্রহীত

ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রকল্পগুলো গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সরকারী উদ্যোগের পরেও তেমন কোন উন্নতির দেখা পায়নি। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)-এর কর্মকর্তারা শপথ নিয়েছিলেন যে, শহরটিকে একটি পরিষ্কার, সবুজ,বসবাসযোগ্য, ডিজিটাল এবং স্মার্ট একটি শহরে রূপান্তরিত করার কথা।

সাধারণত ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি-এর আবর্জনা আমিনবাজার ও মাতুয়াইল এলাকায় নিষ্কাশন করা হয়। কিন্তু এই আবর্জনাকে সঠিকভাবে নিষ্কাশনের জন্য তেমন কোন কার্যকর ব্যবস্থা এখনো নেই। দুই সিটি কর্পোরেশনই আধুনিক উপায়ে বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর সাথে কাজ করেছে।এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে জনগনের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি, পরিবেশের উন্নয়ন প্রকল্প, এলাকাভিত্তিকভাবে কমিউনিটি বর্জ্য পরিচ্ছন্নতার প্রচেষ্টা,স্যানিটারি ডাস্টবিন তৈরি, মেডিকেল বর্জ্য পুনরায় নবায়ন করার প্রকল্প এবং বর্জ্য দিয়ে চালিত পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মান।

সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক নিয়মের মধ্যে রয়েছে প্রত্যেক বাড়ি থেকে নিয়মিতভাবে ময়লা সংগ্রহের ব্যবস্থা। তাছাড়া পাড়ার ডাস্টবিন, হোটেল,বস্তি, রেস্টুরেন্ট, অফিস এবং বাণিজ্যিক এলাকা থেকেও সিটি কর্পোরেশনের দ্বায়িত্বে আবর্জনা সংরক্ষন করার কথা। যে আবর্জনা প্রাকৃতিকভাবে ধ্বংস হয়না,তা বৈজ্ঞানিক উপায়ে নির্মূল করারও কথা।

কিন্তু দেখা যায়, স্থায়ী-অস্থায়ী সুইপারেরা প্রায়ই তাদের দ্বায়িত্বে অবহেলা করে থাকেন। ঢাকার বাসিন্দারা জানায় যে, কর্তৃপক্ষ নগরের আবর্জনা ব্যবস্থাপনা এবং ড্রেন-এর উন্নয়নের কথা বললেও তা এখনো ঠিকভাবে করেননি। এক রিপোর্টে দেখা যায়, ঢাকায় গৃহস্থলি আবর্জনার পরিমাণ প্রতিদিন ৪,৫০০ টনের কাছাকাছি। অথচ ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষের দাবি তা আরও ৫০০ টন কম। নাগরিকেরাও নগর কর্তৃপক্ষের বেধে দেওয়া নিয়ম মেনে চলেননা।রাস্তার ধারে থাকা ডাস্টবিন উপেক্ষা করে তারা রাস্তায় আবর্জনা ফেলেন।

সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ২০১৬ সালে সারা শহরে ৬ হাজারটির মতো আবর্জনা ফেলার বালতি স্থাপন করা হয়েছিলো। কিন্তু নাগরিকদের অবহেলায় সেই প্রকল্প ব্যর্থ হয়। মানুষ সেগুলো ব্যবহার না করে রাস্তাতেই আবর্জনা ফেলতে থাকে। আর এর মধ্যে কিছু বালতি চুরিও হয়েছে।

ডিএনসিসি এর প্রধান আবর্জনা ব্যবস্থাপনা অফিসার আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, এসব বালতি সরিয়ে বিকল্প নতুন এক পদ্ধতি প্রয়োগের কথা। তিনি বলেন, ”আমাদের কর্মকর্তা এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরেরা স্থানীয় মানুষদের সাথে আলোচনা করে জানতে চেষ্টা করবে কি উপায়ে তারা আবর্জনা নিয়ন্ত্রনে রাখতে আগ্রহী।আমরা নগর পরিকল্পনাকারী এবং বিশেষজ্ঞদের সাথেও আলাপ করবো।”

এদিকে অনেক আগে থেকে একটি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) প্রকল্প করার কথা থাকলেও দুই সিটি কর্পোরেশন থেকেই জানানো হয়েছে যে,রাজউক এর পরিকল্পনার ত্রুটির ফলে তা করা সম্ভব হয়ে উঠছেনা। এই প্রকল্পের জন্য ২০১৩ সালে বিশ্বব্যাংক অর্থও দিয়েছিলো। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে তা তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে এবং নির্ধারিত স্থান অবৈধভাবে দখল করে রাখা প্রভাবশালী মানুষের দাপটে এগুলো শেষপর্যন্ত শেষ করা সম্ভব হয়নি।

ডিএনসিসি-তে ৭২টি এসটিএস বানানোর কথা থাকলেও বানানো হয়েছে ৫০টি। আর ডিএসসিসি তে ৪৫ টির মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ১২ টি।

ঢাকার বাতাসে ধূলার দূষণ রোধে দুই সিটি কর্পোরেশনের কোনটিরই নেই কোন কার্যকর ব্যবস্থা। রাস্তার ধারে ফুটপাতে নির্মানাধীন ভবনের ফেলে রাখা আবর্জনা, যেখানে সেখানে নতুন ভবন নির্মান এবং কোন সতর্কতা ছাড়া পুরাতন ভবন গুড়িয়ে ফেলা নিয়ে কারোই মাথাব্যাথা নেই। এগুলোর কারণেও ঢাকায় ধূলার দূষণ বেড়ে থাকে।

এদিকে কর্তৃপক্ষ ময়লাবাহী ট্রাকে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ময়লা বহনের কথা থাকলেও তা মেনে চলেনা ড্রাইভার ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা।

আবর্জনা থেকে পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মানের পরিকল্পনা হলেও অর্থের সংকটের কারণে তার বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। ইতালীর এক প্রতিষ্ঠান এর ঠিকাদারির দ্বায়িত্ব নিয়ে থাকলেও পরবর্তীতে তারা পিছিয়ে যায়। ২০১৩ সালে সেই প্রকল্প সেখানেই মারা যায়।

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের দেওয়া ২১ কোটি টাকা অর্থ সহায়তায় এক প্রকল্পও ব্যর্থ হয়েছে সচেতনতার অভাব এবং বাজে আবর্জনা ব্যবস্থাপনার কারণে। এই প্রকল্পের নাম ছিলো থ্রি আর- রিডিউস, রিইউজ, রিসাইকেল।

আমিনবাজার এবং মাতুয়াইলে আবর্জনা ফেলার কারণে আশেপাশের এলাকার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভীষনভাবে। সেখান থেকে নিগত লিচেট পানিতে মিশে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। লিচেট হলো আবর্জনার স্তুপ থেকে নিগত এক ধরনের তরল যা আবাদী জমি, পানির উৎস ও মৎস্য শিল্পের জন্য বেশ হুমকির কারণ।

মাতুয়াইলে অবশ্য লিচেট নিয়ন্ত্রনের জন্য ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু তা এই বিপুল আবর্জনার চাপ সামলাতে যথেষ্ট নয়। আর আমিনবাজারে লিচেট নিয়ন্ত্রনের কোন ব্যবস্থাই নেই। ডিএনসিসি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, তারা এটি নিয়ে কাজ করতে শুরু করেছিলেন কিন্তু তা সম্পন্ন হয়ে ওঠেনি।


বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top