ইউটিউব দেখে সাম্মাম চাষ, ২ মাসে আয় আড়াই লাখ
মধ্যপ্রাচ্যের বাঙ্গি জাতের ফল সাম্মাম বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে সফল গোপালগঞ্জ সদরের চর গোবরা গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী শেখ। মাত্র ৪২ শতক জমিতে ৩ প্রজাতির সাম্মাম চাষ করেছেন তিনি। ফলনও হয়েছে ব্যাপক। মাত্র ৫৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে দুই মাসে আড়াই লাখ থেকে তিন লাখ টাকা আয় করবেন বলে আশা করছেন আইয়ুব আলী শেখ।
জানা গেছে, ইউটিউব দেখে গত বছর একই জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে সাম্মাম চাষ করেছিলেন আইয়ুব আলী। সেই বছর তিনি মাত্র দুই মাসেই আড়াই লাখ টাকা আয় করেছিলেন। অল্পদিনে লাভজনক ফসল হওয়ায় চলতি বছরের জুন মাসের প্রথম দিকে একই জমিতে তিনি সাম্মাম ফলের চাষ করেছেন। এ বছরে এখন পর্যন্ত তিনি এক লাখ টাকার সাম্মাম চাষ করেছেন। আরও দুই লাখ টাকার সাম্মাম বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন আইয়ুব আলী শেখ। আইয়ুব আলীর সাম্মাম চাষ দেখে অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন এ ফল চাষে।
সাম্মাম বিদেশি ফল রসালো খেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি। এছাড়া পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হওয়ায় স্থানীয় বাজারেও চাহিদা রয়েছে এ ফলের। প্রতি কেজি সাম্মাম স্থানীয় বাজারে আইয়ুব আলী বিক্রি করছেন ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা। ভালো দাম পেলে জেলার বাইরের বাজারগুলোতেও বিক্রি করার আশা ব্যক্ত করেছেন আইয়ুব।
চরগোবরা গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৪২ শতাংশ জমির পুরোটা জুড়ে সাম্মাম ঝুলে আছে। রক স্টার ও এ্যারোমা সুইট প্রজাতির সাম্মাম, ফ্রুট ব্যাগিং করে রাখা হয়েছে। আর গোল্ডেন হানি ডিউ জাতের সাম্মাম খোলামেলাভাবে বেড়ে উঠছে। এ জাতের হলুদ সাম্মাম পুরো জমি জুড়ে নয়নাভিরাম শোভা ছড়াচ্ছে। গাছের থেকে সাম্মামেরই বেশি দেখা মিলছে। প্রতিদিন অনেকেই এই সাম্মাম চাষ দেখতে ভীড় করছেন জমিতে। কেউবা আবার পরামর্শ নিচ্ছে আইয়ুব আলীর কাছ থেকে।
সাম্মাম চাষি মো. আইয়ুব আলী শেখ বলেন, আমি সিঙ্গপুরে চাকরি করতাম। চাকরি ভালো লাগত না। পরে দেশে ফিরে এসে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এরপর গত বছর ইউটিউবে সাম্মাম চাষ দেখে আমি অনুপ্রাণিত হই। তারপর কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে মালচিং ফিলিং পদ্ধতিতে সাম্মাম চাষ করি। এখানে হলুদ ফ্রেমন ট্রাফ (পোকামাকড় নিধক) স্থাপন করা হয়েছে। তাই কীটনাশক তেমন প্রয়োগ করতে হয়নি।
তিনি আরও বলেন, জুনে মাত্র ৪০ শতাংশ জমিতে সাম্মাম চাষাবাদ করি। ৬০ দিনের মাথায় সাম্মাম সংগ্রহ করে বাজারজাত শুরু করেছি। প্রতিটি সাম্মামের ওজন দুই কেজি থেকে সোয়া চার কেজি পর্যন্ত হয়েছে। সাম্মাম চাষে আমার ব্যয় হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। প্রতি কেজি সাম্মাম ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। চলতি মাসের মধ্যেই আড়াই লাখ থেকে ৩ লাখ টাকার সাম্মাম বাজারে বিক্রি করতে পারব। এখান থেকে আমি মাত্র ৭৫ দিনেই আড়াই লাখ টাকা থেকে তিন লাখ টাকা লাভ করতে পারব। প্রতিদিন সাম্মাম চাষে আগ্রহীরা আমার কাছে পরামর্শ নিতে আসছেন।আমিও তাদের সাম্মাম চাষে সকল পরামর্শ দিচ্ছি।
পাশের গ্রাম থেকে সাম্মাম চাষ দেখতে আসা সবুজ মিয়া বলেন, আইয়ুব আলী চাচার সাম্মাম চাষ দেখতে এসেছি। খুব ভালো ফলন হয়েছে।জানতে পারলাম এটা খুব লাভজনক একটি ফসল। আমাদেরও সাম্মাম চাষ করার ইচ্ছা আছে। তাই আইয়ুব চাচার কাছে পরামর্শ নিয়েছি। এছাড়া কৃষি বিভাগ আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আ. কাদের সরদার বলেন, আইয়ুব আলী শেখ গতবছরও একই জমিতে সাম্মাম চাষ করেছিল। এবারও তিনি একই জমিতে সাম্মাম চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে ভালো। তিনি এবছর ওই জমি থেকে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করবেন বলে আশা করছি। সাম্মাম একটি লাভজনক ফসল। অল্পদিনে অধিক লাভজনক ফসল হওয়ায় জেলায় দিন দিন এই সাম্মাম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষক। আমরাও তাদের উদ্বুদ্ধ করছি এ সাম্মাম চাষে।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: